ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, ভেনিজুয়েলার উভয় পক্ষ চাইলে তিনি সঙ্কট নিরসনে মধ্যস্থতা করতে রাজি আছেন। মধ্যপ্রাচ্য সফর থেকে ফেরার পথে মঙ্গলবার বিমানে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
পোপ ফ্রান্সিস নিশ্চিত করেন যে, ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো তাকে পত্র লিখেছেন। তবে সেই পত্র এখনো পাঠ করেননি। সোমবার মাদুরো ইতালির প্রচারমাধ্যম স্কাই টিজি২৪কে বলেন, তিনি সংলাপের সুযোগ তৈরি ও জোরদারের প্রক্রিয়া শুরু করতে সহায়তার জন্য পোপের কাছে পত্র পাঠিয়েছেন।
ভ্যাটিক্যানের সরাসরি মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে পোপ বলেন, আমি পত্রখানা পাঠ করব এবং দেখবো কী করা যায়। তবে প্রাথমিক শর্ত হলো উভয়পক্ষের তা চাওয়া। আমরা এটাই চাই। আগে ভ্যাটিকানের মধ্যস্থতায়সহ বিভিন্ন দফায় সংলাপের ব্যর্থতার কারণে বিরোধীরা সন্দিহান।
তারা মনে করছে, বিক্ষোভ দমাতে ও সময়ক্ষেপণের জন্য সংলাপের আশ্রয় নিচ্ছেন মাদুরো। পোপ আরো বলেন, নিয়মতান্ত্রিক মধ্যস্থতা হবে কূটনীতির শেষ ধাপ। তিনি বলেন, ভ্যাটিকান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অন্যান্য সদস্যকে কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে সংলাপ প্রক্রিয়া শুরুর জন্য দুই পক্ষকে কাছাকাছি আনা।
আর্জেন্টিনায় বিক্ষোভ
আনাদোলু এজেন্সি জানায়, ভেনিজুয়েলায় মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার বুয়েনস আয়ার্সে বিক্ষোভ করেছে শত শত আর্জেন্টিনাবাসী। বেসরকারি সংস্থা, ট্রেড ইউনিয়ন এবং ছাত্র ক্লাবগুলো ইউনিভার্সিটি অব বুয়েনস আয়ার্সে একত্রিত হয়েছিল এবং মার্কিন দূতাবাস প্রদক্ষিণ করেছিল। এ সময় তারা ‘লাটিন আমেরিকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বন্ধ হোক!’ এবং ‘ভেনিজুয়েলাতে সংলাপ ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক!’ বলে স্লোগান দেয়।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, শান্তি কেবলমাত্র সংলাপের মাধ্যমেই অর্জন করা যাবে, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নয়। যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানির নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাদুরো সরকারের ওপর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে।
‘ইইউ গণতন্ত্র বিরোধী’
তা ছাড়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান মঙ্গলবার ভেনিজুয়েলার নেতা নিকোলাস মাদুরোকে উৎখাতের গণতন্ত্রবিরোধী চেষ্টার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অভিযুক্ত করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাম উল্লেখ করে এরদোগান বলেন, ‘একদিকে আপনার মুখে ‘গণতন্ত্র, গণতন্ত্র, গণতন্ত্র’ এবং ‘ব্যালট বক্স, ব্যালট বাক্স, ব্যালট বক্স’ এবং অন্যদিকে সহিংসতা ও বর্বরতার মাধ্যমে সরকারকে উৎখাত করার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন।”
ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেনসহ ইউরোপের ক্ষমতাধর দেশগুলো সোমবার ভেনিজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা জুয়ান গুইদোকে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। অবশ্য মাদুরো স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনে ইউরোপীয় আল্টিমেটাম প্রত্যাখ্যান করেছে।
উল্লেখ্য, স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট জুয়ান গুইদোর অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলায় ত্রাণ পাঠালেও প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো তা আটকে দিয়েছেন। ত্রাণ প্রত্যাখ্যান করে যুক্তরাষ্ট্রকে তেলের ওপর আরোপ করা অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন মাদুরো। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাকে ‘সম্মানহানী’র প্রচেষ্টা আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, ভেনিজুয়েলার মানুষ ভিক্ষুক নয়।