লটারিতে দেড় কোটি টাকা জিতেও এখন ফকির

ছিলেন গাড়ির খালাসি। রাতারাতি হন কোটিপতি। এখন ফকির!

স্ত্রী বিড়ি বাঁধেন। আর তিনি ঘরে বসে থাকেন। লোকজন এলে পরামর্শ দেন, ‘লটারি কখনও মানুষের কপাল বদলাতে পারে না। সর্বনাশের পথে পা বাড়িয়ো না।’

২০০২ সালের এক শীতের সকালে একটি ‘দীপাবলি বাম্পার’ যে তাকে দেড় কোটি টাকার পুরস্কার পাইয়ে দেবে, স্বপ্নেও ভাবেননি হাসনাবাদের মুরারিশা গ্রামের বাসিন্দা আজিজ মোল্লা। ছিলেন ম্যাটাডরের খালাসি। আগের দিন বিকেলে বসিরহাটের ত্রিমোহনীতে গিয়ে একটি দোকানে চা খেতে ঢুকেছিলেন। সেখানে এক জনের অনুরোধে ১০০ টাকা দিয়ে ওই লটারির টিকিট কেনেন। পরের দিনই ‘রাজা’!

মুরারিশা গ্রামের সেই ‘রাজকাহিনি’ এখনও লোকের মুখে ফেরে। সে দিন আজিজকে একটি বার দেখার জন্য বাড়ির সামনে জনসমুদ্র! আজিজের কাছ থেকে টিকিট কেড়ে নেওয়ারও চেষ্টা হয়। পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।

সরকারি রাজস্ব কাটার পরে আজিজের হাতে আসে ৬৮ লাখ টাকা। এক বার তার দেখা পেতে, তার ছোঁয়া লটারির টিকিট কাটতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। স্থানীয় বাজারে রাতারাতি গজিয়ে ওঠে একাধিক লটারির দোকান। ঝড়ের গতিতে টিকিটও বিক্রি হতে থাকে।

পুরস্কারের অর্থে আজিজ মোটরবাইক, বাস, গাড়ি এবং নতুন আসবাব কিনে ফেলেন। বন্ধুদের নিয়ে ঘনঘন কলকাতার হোটেলে যাতায়াত শুরু হয়। অঢেল আমোদ-প্রমোদে মেতে ওঠেন আজিজ। বাবা-মা এবং আট ভাইবোনকেও এক লাখ টাকা করে বিলিয়ে দেন। আর একটা কাজও শুরু করেন। ফের লটারির টিকিট কাটা। আজিজের কথায়, ‘তখন অন্তত ৮-১০ লাখ টাকার টিকিট কিনেছি।’

কিন্তু না। আর কোনও টিকিট আজিজকে ‘রাজা’ করেনি। উল্টে লোভে পড়ে আরও টিকিট কাটার নেশা বেড়ে যায় আজিজের। বছর খানেকের মধ্যে পুরস্কারের সব টাকা শেষ হয়। তার পর পরিবারের জমানো টাকা, স্ত্রীর অলঙ্কারেও হাত পড়ে। বাড়তে থাকে ধার। সুখের দিন দ্রুত শেষ হয়। এমনকি, তাকে দেখে এলাকার দুএক জনও রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে লটারির টিকিট কিনতে ঘরবাড়ি, ব্যবসা- সব খুইয়ে বসেন বলে এলাকার লোকজন জানান।

ভাঙা গ্রিল দেওয়া রং-চটা ঘরে এখন স্ত্রী সাফিনুর বিবি এবং তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে কোনও মতে দিন গুজরান করেন আজিজ। স্ত্রীর বাঁধা বিড়িতে টান দেন। তাঁর খেদ, ‘অনেক টাকা উড়িয়েছি। তখন ভাবিনি, এমন দিন আসবে। কয়েক মাস আগেও একটা মাংসের দোকানে কাজ করতাম। সেটাও গিয়েছে। জানি না কী হবে!’

সাফিনুরের আক্ষেপ, ‘স্বামী গাড়িতে কাজ করত। আমি বিড়ি বাঁধতাম। সংসার চলে যাচ্ছিল। এই লটারিই সর্বনাশ করে দিল।’

গ্রামের কেউ কেউ লটারিকে ভাল চোখে দেখেন না। তাদেরই একজন সরিফুল গাজি। তার কথায়, ‘লটারি যে মানুষকে কোথায় নামাতে পারে, তা আজিজ এবং গ্রামের দুএক জনকে দেখে বোঝা যায়। পাওনাদারেরা আজিজের আসবাব, গাড়ি, এমনকি, শান বাঁধানো পুকুর ঘাটের ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে গিয়েছে। তবু এখনও অনেকে গোছা গোছা লটারির টিকিট কিনে চলেছেন!’ আর আজিজ-সরিফুলেরা প্রশ্ন করেন, ‘এই লটারিতে কার যে আসল লাভ হয়, কে জানে?’

সূত্র: আনন্দবাজার

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top