সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার চাঞ্চল্যকর স্কুল ছাত্র শিশু ইমন হত্যা মামলায় ৪ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার দুপুরে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক রেজাউল করিম মামলার এ রায় দেন। রায়ে ৩০২/৩৪ ধারায় ও নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধিত ২০০৩ সালের ৮ এর ৩০ ধারায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অপহরণের অপরাধে ২০১/৩৪ ধারায় ৩ বছরের সাজা ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, বাতিরকান্দি গ্রামের সালেহ আহমদ, একই গ্রামের রফিক, জায়েদ ও উপজেলা ব্রাহ্মণজুলিয়া গ্রামের সুয়েবুর রহমান সুজন। এদের মধ্যে সালেহ আহমদ পলাতক রয়েছেন।
প্রায় ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট মামলাটির নথি ও পর্যবেক্ষণ পড়ে শোনান বিচারক। এরআগে গত সোমবার যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছিলো। শিশু ইমন হত্যা মামলায় ২৪ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শুরু হয়।
আলোচিত এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন, বর্তমানে হবিগঞ্জের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক মোহাম্মদ শহীদুল আমিন ও সুনামগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যাম কান্ত সিনহা, চিকিৎসক, তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নিহতের মা-বাবাসহ ২৩ জন।
জানা যায়, ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের বাতিরকান্দি গ্রামের সৌদি প্রবাসী জহুর আলীর ছেলে ও লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানার কমিউনিটি বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান ইমনকে ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ অপহরণ করা হয়। পরে মুক্তিপনের টাকা পাওয়ার পরও অপহরণকারীরা শিশু ইমনকে হত্যা করে।
৮ এপ্রিল মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সিলেটের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে শিশু ইমনের হত্যাকারী সুয়েবুর রহমান সুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, বিষের বোতল ও রক্তমাখা কাপড় উদ্ধার করে। বাতিরকান্দি হাওর থেকে ইমনের মাথার খুলি ও হাতের হাড় উদ্ধার করে পুলিশ।
অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় জড়িত কয়েকজনকে। অপহরণ ও মামলা দায়েরের প্রায় সাড়ে ৭ মাস পর ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। অভিযুক্তদের মধ্যে ৩ জনকে আদালতে অভিযোগ গঠনের সময় বাদ দেওয়া হয়। অপর চার আসামির মধ্যে বাতিরকান্দি গ্রামের সালেহ আহমদ ছাড়া একই গ্রামের রফিক, জায়েদ ও ব্রাহ্মণজুলিয়া গ্রামের সুজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় সালেহ আহমদ (পলাতক) ছাড়া অন্য আসামিরা উপস্থিত ছিলেন।
আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মামলার বাদী শিশু ইমনের বাবা জহুর আলী সাংবাদিকদের বলেন, আর কোনো মায়ের বুক যেনো এভাবে খালি না হয়, কোনো বাবা যেনো সন্তানের হত্যার বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয়। আসামিদের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শমিউল আলম বলেন, শিশু ইমন হত্যার ন্যায় বিচার হয়েছে। আমরা আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
অপরদিকে, মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবী সুশীল চন্দ্র দাস মামলার রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো।