নানদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করতেন যাজকরা

প্রথমবারের মতো পোপ ফ্রান্সিস যৌন নিপীড়নের ব্যাপারে যাজকদের দোষের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, গির্জার নানরা যাজকদের কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

গির্জায় যাজকদের দ্বারা শিশু ও তরুণদের ওপর যৌন নিপীড়নের দীর্ঘ অভিযোগের মধ্যেই পোপ ফ্রান্সিস এ মন্তব্য করেন। তিনি আরো স্বীকার করেন যে, গির্জার যাজকরা নানদের যৌন নিপীড়নের পাশাপাশি তাদেরকে যৌনদাসী করেও রেখেছিলেন।

আগের পোপ বেনেডিক্ট ষষ্ঠ এ কারণে পুরো একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সমস্যাটি মোকাবেলার চেষ্টা করেছে গির্জা, তবে এসব ঘটনা এখনো ঘটছে।

গত বছরের নভেম্বরে ক্যাথলিক গির্জার নানদের বৈশ্বিক সংগঠন জানিয়েছিল, ‘ভয় ও নীরবতার সংস্কৃতি’ কারণে নানরা গির্জার এ যৌন নিপীড়নের ব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারেননি।

পোপ কী বলেছেন?
গত মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যে একটি ঐতিহাসিক সফরের সময় সাংবাদিকদের পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ হিসাবে দেখার প্রবণতাটি এখনো গির্জায় একটি সমস্যা হিসাবে রয়ে গেছে। যাজক ও বিশপরা নানদের নিপীড়ন করেছেন। তবে গির্জা এখন এসব কেলেঙ্কারি নিয়ে সতর্ক হয়েছে এবং এটি বন্ধে কাজ করছে। বেশ কয়েকজন যাজককে বরখাস্ত করা হয়েছে।’

‘পোপ বেনেডিক্ট সাহস করে নারীদের একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিলেন, কারণ সেখানে যাজক বা প্রতিষ্ঠাতাদের হাতে নারীদের নিপীড়নের বিষয়টি যৌন দাসত্বে রূপ নিয়েছিল।

পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, নানদের ওপর যৌন নিপীড়নের এখনো গির্জার একটি অব্যাহত সমস্যা, তবে কয়েকটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানেই এগুলো ঘটছে, বিশেষ করে নতুনদের ক্ষেত্রে। আমি মনে করি, এটা এখনো ঘটছে, কারণ এটা এমন নয় যে, আপনি বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেও তা বন্ধ হয়ে যাবে।

যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে যেখানে
পোপ বেনেডিক্ট ২০০৫ সালে ফ্রান্সের কম্যুনিটি অব সেন্ট জেন নামে নারীদের একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি রোমান ক্যাথলিক পত্রিকার কাছে স্বীকার করে, যাজকরা বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে এমন আচরণ করেছেন, যা তাদের কৌমার্য রক্ষার ব্রতের সঙ্গে খাপ খায় না।

ভারতে আরেকটি ঘটনায় গতবছর একজন বিশপকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে একজন নানকে ১৩ বার ধর্ষণ করেছেন। যদিও ওই যাজক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গত বছর চিলিতে যাজকদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলেন গির্জার নানরা। এরপর তদন্ত শুরু করে ভ্যাটিকান। ইতালি ও আফ্রিকার গির্জায় যৌন নিপীড়নের কয়েকটি ঘটনার খবর প্রকাশিত হয়।

চার্চের নারীরা কী বলছেন
ভ্যাটিকানের নারীদের ম্যাগাজিন, উইমেনস চার্চ ওয়ার্ল্ড বলছে, অনেক ঘটনায় নানরা ধর্মীয় বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও গর্ভপাত করাতে বাধ্য হয়েছেন।

নিপীড়নের বিষয়ে পোপের এ স্বীকারোক্তিকে স্বাগত জানিয়ে ম্যাগাজিনের সম্পাদক লুসেত্তা স্কারাফিয়া বলছেন, এটা হয়তো খানিকটা সাহায্য করবে, কিন্তু গির্জাকে আসলে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে।

”এ ধরনের কেলেঙ্কারির প্রতি যদি বরাবরের মতো গির্জা চোখ বন্ধ করে রাখে, তাহলে নারীদের ওপর নির্যাতনের পরিস্থিতি কখনোই পাল্টাবে না।” তিনি বলছেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top