অবুঝ শিশুদের ধর্মঘট, জামিন পেলেন মা

বরগুনায় মায়ের মুক্তির দাবিতে গত শনিবার দিনভর জেলা প্রসাশক কার্যালয়ের সামনে ধর্মঘট পালন করেছিলো দুই অবুঝ শিশু। পরদিন ভার্চুয়ালের মাধ্যমে আইনজীবী জামিন প্রার্থনা করলে আদালত সোমবার শুনানির জন্য ধার্য রেখেছিলেন। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে অঙ্গীকার নামায় এক মাসের মধ্যে আপোষ মিমাংসার শর্তে জামিন মঞ্জুর করেন বরগুনার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রট আদালত।

জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের শ্বাশুড়ি আলেয়া বেগমের দেয়া মিথ্যা মামলায় পুত্রবধু অনিতা জামান জেল হাজতে। অন্যদিকে মায়ের মুক্তির দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট করেছে বড় ছেলে আলিফ (১৩) ও আড়াই বছরের গালিফ। মায়ের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা রাস্তা থেকে উঠবে না বলে জানিয়েছিল।

শনিবার সকাল থেকে বরগুনা টাউনহল চত্ত্বর ও পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে দুই শিশু।

এ সময় অসহায় আলিফ সাংবাদিকদের জানায়, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অনতিবিলম্বে মায়ের মুক্তি হোক। সেই সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ঘটনার বিচার ও বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর, বরগুনা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০ জুন পারিবারিক কলহের জের ধরে শ্বাশুড়ি বরগুনা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সি.আর ৩৪১/২০২১নং মামলা করেন। এ মামলায় দুই ছেলে ও বড় পুত্রবধুকে আসামি করা হয়েছে। এর কিছুদিন পরে শ্বাশুড়ি আলেয়া বেগম দুই ছেলে পুত্রবধু ১৩ বছরের নাতিসহ পাঁচজনকে আসামি করে একই আদালতে আরেকটি সি.আর ৩৭৮/২০২১নং মামলা করেন। মামলায় তিনি দাবি করেন, তার বড় পুত্রবধুসহ অন্যান্য আসামিরা মারধর করেন।

এদিকে অনুসন্ধান করে জানা যায়, দুটি মামলায় তার বড় ছেলে মনিরুজ্জামান জুয়েল গাজীপুরে তার কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন। যার ডিজিটাল হাজিরা সীট প্রতিবেদকের নিকট রয়েছে।

ওদিকে পুত্রবধুকে জেলে পাঠিয়ে শান্ত হননি মামলার বাদি আলেয়া বেগম। তিনি গত শুক্রবার তালা ভেঙ্গে মেয়ে মনিরাকে নিয়ে ঘরে ওঠেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বসবাসকৃত ঘরটি পুত্রবধূ অনিতা জামানের বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে তৈরি করা। মেয়ে মনিরা বেগমের একাধিক বিবাহের পরেও বাবার বাড়িতে থেকে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে। এর প্রতিবাদ করায় দুই ছেলে ও দুই পুত্রবধুকেসহ প্রতিবেশীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। ছাড়েনি মাত্র ১৩ বছরে শিশু আলিফকেও।

তারা আরো জানায়, বসতঘরে পুত্রবধু থাকলে শ্বাশুড়ি আলেয়া বেগম ও মেয়ে মনিরা থাকবে না। তাই তাকে জেল হাজতে পাঠিয়ে ঘরের তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করেন তারা। অনিতা জামানের বড় ছেলে আলিফ ঘরের তালা ভেঙ্গে ওঠার বিষয়টি জরুরি কল সেন্টার ৯৯৯ এ ফোন করে অভিযোগ করলে বরগুনা সদর থানার কর্তব্যরত এস আই দেবাশীস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। কিন্তু ঘরে তালা ভেঙ্গে ওঠার বিষয়টি তেমন গুরুত্বসহকারে আমলে নেননি। কারণ মা ছেলের ঘরে তালা ভেঙ্গে ওঠা কোনো অপরাধ নয় বলে জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অসহায় আলিফ সকাল ১০টায় বরগুনা টাউনহল চত্ত্বরে এ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। এসময় তার ফুফুর কথিত স্বামী মোঃ হারুন একাধিকবার ফোনে অসহায় আলিফকে হুমকি দেয়।

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালীন সময় সুশিল সমাজের ব্যক্তিরা বলেন, আদালতে মামলায় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কোনো হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। কিন্তু মানবিক দৃষ্টিকোনে অসহায় এই দুই শিশুর পাশে দাড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেননি।

এ বিষয়ে মামলার বাদি আলেয়া বেগমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

 

Share this post

scroll to top