ভোলা জেলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলো অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে। সাইবেরিয়াসহ দূর দূরান্ত থেকে আসা এসব অতিথি পাখিদের উড়ে বেড়ানো আর খাবার সংগ্রহের দৃশ্য মুগ্ধ করে এখানে আগত দর্শনার্থীদের। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা ঢালচর মনপুরা, কলাতলীর চর, চর কুকরি মুকরি, চর শাহজালাল, চর শাজাহান, চর পিয়াল, আইলউদ্দিন চর, চরনিজাম, চর পাতিলা, ডেগরারচরসহ মেঘনা-তেঁতুলিয়ার উপকূলবর্তী মাঝের চর, মদনপুরাসহ বিভিন্ন চরে পাখিদের আনা-গোনা মন কাড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে সাগর-নদী, চর আর সবুজ বনের সমাহার। দু’পাশে পাখিদের কিচির-মিচির আওয়াজ আর কলকাকলি শোনা যায়। এমন দৃশ্যের দেখা মেলে সকাল-বিকেল। একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ডানামেলে পাখিদের উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য মন ভোলায়। বিশেষ করে ডুবোচরগুলোতে তাকালেই দেখা যায় দল বেঁধে সারি সারি পাখির মেলা।
সাধারণত এসব চরে জুলফি পানচিল, গাঙ্গচিল, সোনাজিরিয়া, উত্তরীয় লেঞ্জাহাঁস, কালোলেজ জৌরালি, ইউরেশিও গুলিন্দা, ধূসর মাথা টিটি, সিথি হাঁস, খুন্তে হাস, খয়রা চখাচোখি, ছোট পাকৌরী, ছোট বগা, বড় বগা, পিয়ঙ হাঁস, ধূসর বগা, পাতি হাস, কালো মাথা গাঙচিল, ছোট ধলাজিরিয়া, ছোট নর্থ জিরিয়া, গো বগা, মেটে রাজ হাঁস, পাতি বাটান, চেগা, পাতি চেগাসহ বিভিন্ন পাখি দেখা যায়।
চর কুকরী-মুকরীর চর-পাতিলায় দেশি-বিদেশি পাখি দেখার জন্য বন বিভাগ কতৃক নির্মিত হয়েছে পাখি পর্যবেক্ষন কেন্দ্র। এখান থেকেই এ চরের অতিথি পাখি সহজেই দেখা যায়। এছাড়া পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু, ছাতা, বেঞ্চ ও একটি ব্যারাকও নির্মাণ করা হয়েছে। শীতের এ সময়টাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখি দেখার জন্য এখানে ছুটে আসেন পর্যটকরা।
এখানে পাখি দেখতে আসা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমিরুল মিদুল ও আল-আমিন বাসস’কে বলেন, এখানে প্রকৃতি আপন হাতে তার সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে। আর শীতের সময় এসব অতিথি পাখি আরো সৌন্দর্যমন্ডিত করে এখানকার পরিবেশ। পাখি দেখতে পেলেই ক্যামেরা বন্ধি করছেন বলে জানান তারা।
তবে স্থানয়িরা বলছেন, চরাঞ্চলে বসতি নির্মাণ, চারণ ভূমি আর শিকারীদের কারণে পাখিদের আগমন কিছুটা কম যাচ্ছে। পাখি শিকার বন্ধ এবং জনগণকে আরো বেশি সচেতন করা গেলে পাখিদের আগমন আরো বৃদ্ধি পাবে।
পাখি দেখতে আসা পর্যটক রশিদ হারুন ও ছোটন সাহা বাসস’কে বলেন, চরে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় অতিথি পাখির দল। পাখিদের কিচির-মিচির শব্দ এক ভিন্নতর মুগ্ধতার সৃষ্টি করে। তবে পাখিদের বিচরণ আরো নির্বিঘ্ন করার উপরে জোর দেন তারা।
জাবেদ মিয়া, শহিদুল ইসলাম ও বারেক মাঝি নামের স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করেন, এক শ্রেনির অসাধু শিকারী বিষটোপ, ধানের সাথে বিষ মিশিয়ে আবার ছোট ছোট মাছের সাথে বিষ মিশিয়ে পাখি শিকারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চরে আশ্রয় নেয়া পাখি অনেকটা অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। তাই এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসেম মহাজন বলেন, প্রতি শীত মৌসুমেই এখানে পাখি দেখার জন্য পর্যটকরা ভিড় করেন। পাখি সংরক্ষণ ও বিচরণ নির্বিঘœ করতে লিফলেটসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে পাখি শিকারে।
এ ব্যাপারে ভোলার বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: ফরিদ মিয়া বাসস’কে বলেন, বিগত বছরের মত এ বছরও ভোলাতে অতিথি পাখিদের আগমন ঘটেছে, এখানকার চরগুলো অতিথি পাখিদের জন্য বিখ্যাত। পাখিদের কেউ যাতে শিকার করতে না পারে সে জন্য বন বিভাগের প্রতিটি রেঞ্জ থেকে টহল জোরদার করা হয়েছে। তারা নিয়মিত টহল দিচ্ছে।
সূত্র : বাসস