১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে ময়মনসিংহের অনেক লোক প্রাণ হারান। সেই শহীদদের স্মরণে ১৯৯৯ সালে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন শহরের পাটগুদাম এলাকায় নির্মাণ করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। ৫০ ফুট উচুঁ এই স্মৃতিস্তম্ভটির স্থাপনায় রয়েছে একটি রাইফেল। রয়েছে রাইফেলের বেয়োনেটে ফুটন্ত শাপলা। কিন্তু সতের কোটি বাঙ্গালীর আবেগ ও সম্মানের এই স্মৃতিসৌধটি আজ পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। এমনকি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ছে স্মৃতিসৌধের স্তম্ভগুলো। যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে স্মৃতিসৌধটি। তবে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগে স্মৃতিসৌধ এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হলেও সারা বছরই স্মৃতিসৌধটির খোঁজ নেননা কেউ। যেকারণে অবাধ বিচরণে স্মৃতিসৌধে যে কেউ জুতা নিয়ে উঠছে, কেউ বসে নেশা করে, অনেকেই আড্ডাবাজি করে। এতে স্মৃতিসৌধের পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে পবিত্রতাও। সৌধটির চারদিকের চারটি দেয়ালের চার-রকমের প্রাচীরচিত্রের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পথে। নির্মাণের সময় স্মৃতিস্তম্ভটিতে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১’র স্বাধীনতা সংগ্রামের বিমূর্ত চিত্র ফুঁটিয়ে তুললেও সর্বসাধারণের অবাধ বিচরণে নষ্টের পথে স্তম্ভটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের সূর্য সন্তানদের স্মরণে এই স্মৃতিসৌধ এলাকায় গরু-ছাগলের অবাধ বিচরণ রয়েছে। এসব পশুর মলত্যাগে নোংরা থাকে সমস্ত স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধ এলাকার আশপাশের রাস্তাগুলোর সংস্কার না হওয়ায় স্মৃতিসৌধের ভেতর দিয়েই অবাধে চলাচল করছে সবাই। এমনকি চলাচলের সুবিধার জন্য স্মৃতিসৌধের ওয়াল ভেঙ্গে করা হয়েছে যাতায়াতের রাস্তা। স্মৃতিসৌধটি খোলামেলা থাকায় জনসমাগম থাকে সবসময়ই। নিয়মিত স্মৃতিসৌধ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না হওয়ায় পশুপাখি এবং মানুষের মলত্যাগের দুর্গন্ধ সব সময় বাতাসে ভাসতে থাকে। স্তম্ভটির উপরের অংশ ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ায় নিচে জমা হয়েছে সুড়কি, পাথরের স্তুপ।
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সাংসদ নাজিম উদ্দিন আহামেদ বলেছেন, জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের তত্বাবধানে ছিল। দুই বছর যাবৎ এটাতে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ কেউ উদ্যোগ নেয় না। নেগলেজেন্সি দেখি আর নেগলেজেন্সিই বলেন স্পেসিকেলি এটার প্রতি তাদের আস্থাও নাই। অপরদিকে অর্থ খরচ হবে বলেও তারা এটার প্রতি নজর দেয় না। এটা আমরা নিন্দা জানাই পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখার জন্য । স্মৃতিসৌধটা যে অবহেলিত তার জন্য আমরা এই প্রশাসনের আচরনকে অনমনীয় বলি।
ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই বিষয়ে জেলা প্রশাসন ভাল বলতে পারবে। তবে দেখভাল করে জেলা পরিষদ। আমরা জেলা পরিষদ থেকে দুই কোটি প্রকল্প গ্রহন করেছিলাম। ওখানে জেলা পরিষদ শিশুপার্ক হবে। আমাদের না জানিয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে অফিস করার জন্য দেওয়া হইছে। আমাদের একটা কেয়ারটেকার ছিল। এখন তাকে আমরা অন্য জায়গায় ডিউটি দিয়েছি।
এবিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, বিষয়টি নজরে এসেছে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।