নিয়োগে অনিয়ম, তথ্য গোপন ও অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মো. মুশফিকুর রহমান (হীরক মুশফিক)। এমন অভিযোগ এনে গত ২৪ জুন সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্রার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সৈয়দ মামুন রেজা।
২০১৮ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ফলাফলের যে যোগ্যতা চেয়েছিলো এরচেয়ে কম যোগ্যতা নিয়েই ওই বিভাগের প্রভাষক পদে কর্মরত আছেন তিনি। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৩.৫০ (৪.০০) এর স্থানে তার ছিল ৩.২৫। প্রশাসন স‚ত্রে জানা যায়, প্রভাষক মুশফিক বিশেষ যোগ্যতায় নিয়োগ পেয়েছেন। তাঁর নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতা কি ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে হীরক মুশফিক বলেন, আমার একটি প্রকাশনা এক্সেপ্টেন্স লেটার পেয়েছিল যা মানসম্পন্ন স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও প্রশাসনের কাছে মনে হয়েছে বলেই আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এবিষয়ে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সেই সময়কার বিভাগীয় প্রধান ইসমতআরা ভূইয়া ইলা বলেন, মুশফিক স্যারের একটি লেখা ভারতের ইউজিসি স্বীকৃত পিয়ার-রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। এই বিষয়টি বিবেচনা করে তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয় নিয়োগ বোর্ড। উল্লেখ্য, ইসমতআরা সেই নিয়োগের প্লানিং কমিটির সদস্য ছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে, সেই সময়কার বিভাগটির প্রধান ইসমত আরা ভূইয়া ইলার ইচ্ছাতেই কম সিজিপিএ পেয়েও নিয়োগ পরীক্ষায় সুযোগ পেয়েছিলেন মুশফিকুর। তবে ইসমতআরা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করেছেন। নিয়োগ বোর্ড ও প্লানিং কমিটির বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে যে সেই নিয়োগ পরীক্ষায় কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবহেলা করা হয়েছে। কিন্তু ইসমতআরা বলেন, এই নিয়োগে আমাদের নাট্যকলা বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ৩ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেন। যদিও তখনও তাদের স্নাতকোত্তর ফলাফল বেরোয়নি। তবুও শুধুমাত্র অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়েই তাদেরকে আমরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছি। যদিও তারা ফেলও করতে পারতো, পাশও করতে পারতো। সুতরাং অবহেলা আমরা করিনি। অবহেলা করলে করতে পারে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান। কেন নিয়োগের আবেদনের সময় শেষ হয়ে গেলেও তখন পর্যন্ত তারা ফলাফল দিতে পারেনি এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে।
গত ২৪ জুন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সৈয়দ মামুন রেজা মুশফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ৭টি ভিন্ন অভিযোগ করেছেন। এরমধ্যে কম গ্রেড, বিশেষ যোগ্যতার হেরফের, অযৌক্তিক অসাধারণ ছুটি, তথ্য গোপণ করে প্রশাসনের বিনা অনুমতিতে ভারতে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সুবিধা লাভ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনের অর্থ ও ভারত সরকারের বৃত্তির অর্থ একইসাথে গ্রহণ করা উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি ছুটির আইন অনুযায়ী অস্থায়ী চাকরির প্রথম এক বছরের মধ্যে কোনো শিক্ষা ছুটি না পাওয়ার কথা থাকলেও বিশেষ সুবিধায় নিয়েছেন অসাধারণ ছুটি।
মামুন রেজা অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন, বিভাগে অনিয়মের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছিলো তাই অভিযোগ করেছি।এ বিষয়ে অভিযোগ কারী ড. সৈয়দ মামুন রেজা বলেন, আবেদন ফরমে আমি যা উল্লেখ করেছি সকল কিছু সত্য। এবিষয়ে নিয়োগ দেওয়ার সময় দেখেছেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তখন যারা দায়িত্বে ছিলেন এটা তারা ভালো বলতে পারবেন। তবে এই নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক মো মুশফিকুর রহমান বলেন, আমি আলাদা করে কিছু বলতে চাই না। প্রশাসন আমাকে নিয়োগ দিয়েছে তারাই আমার সকল উত্তর দিতে পারবে। আমি নিয়ম মেনেই সব কিছু করেছি, আর প্রশাসন আমার সকল কিছু বিস্তারিত দেখেই আমাকে নিয়োগ দিয়েছে।
এমন অভিযোগ, ছুটি ও নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এটি প্রথমে আমরা বিশ্লেষণ করে দেখবো ঠিক আছে কিনা। যদি আমরা প্রাথমিক ভাবে না পারি তখন কমিটি করে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।
অন্যদিকে অভিযোগকারী শিক্ষক ড. সৈয়দ মামুন রেজার বিরুদ্ধেও বিভাগটির অন্য এক শিক্ষক বলেছেন তিনিও কম সিজিপিএ নিয়ে বিভাগের শিক্ষক হয়েছেন, সে তিনিই কিভাবে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন? এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে তিনি প্রায়ই বিভিন্ন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যেখানে তার নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন অভিযোগ করার পর একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। উপাচার্যের অনুমতিক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ সংবাদের প্রতিবাদ লিপি প্রকাশ করেছে গত ০৬ জুলাই। তবে এ নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মেও প্রশাসন কেন তদন্ত না করে উল্টো শুধু প্রতিবাদ করছে এ নিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থী মহলে রয়েছে নানা গুঞ্জন।