বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। পর্যায়ক্রমে সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে নতুন ফরম্যাটে আনতে চাইছে দলটি। নতুন কমিটি গঠন ও পুরনো কমিটির হালনাগাদ করতে চায় দলটির হাইকমান্ড। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির সর্বস্তরে দল পুনর্গঠন ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নতুন নেতৃত্ব তৈরির দাবি ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।
এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও রোববার রাতে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের নেতৃত্বেও পরিবর্তন আনা হবে।
এভাবে কৃষিবিদদের ও প্রকৌশলীদের সংগঠনের নতুন কমিটি ঘোষণা হবে। পর্যায়ক্রমে স্বল্প সময়ের মধ্যেই অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোরও নতুন কমিটি গঠন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
জানা যায়, ২১ বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদল। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, পদ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে গ্রুপিংসহ বিভিন্ন কারণে সংগঠনটি এখন কঠিন সঙ্কটে। বিএনপির যে কয়েকটি সহযোগী সংগঠন রয়েছে তার অন্যতম কৃষকদল।
কৃষি ও কৃষকদের উন্নতির লক্ষ্যে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কৃষকদল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার ১৯ দফা কর্মসূচির মধ্যে ৫ নম্বরে বলা আছে, ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ তথা জাতীয় অর্থনীতিকে জোরদার করা।’ কিন্তু কালের পরিক্রমায় ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটির কার্যক্রম এখন কঠিন সঙ্কটের মুখে। বর্তমানে অস্তিত্বহীন কৃষকদল। এ অবস্থায় কৃষকদলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচন করা হবে। যেকোনো সময় কৃষকদলের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ১৬ মে সংগঠনটির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল হয়। দলটির ঘোষণাপত্র এবং গঠনতন্ত্রের ৯ নম্বর ধারায় উল্লেখ আছে, ‘জাতীয় কাউন্সিল হবে সংগঠনের সর্বোচ্চ সংস্থা। ২ বছরে একবার জাতীয় কাউন্সিল বা জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দুই মাসের এবং জরুরি অবস্থায় ১৫ দিনের নোটিশে জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত করা যাবে।’ সেই হিসেবে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০ বছর আগে। ২০১৭ সালে একাধিকবার কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ হলেও অদ্যাবধি কোনো কাউন্সিল করতে পারেনি কৃষকদল।
কৃষকদল সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালের ১৬ মে সম্মেলনের মাধ্যমে মাহবুবুল আলম তারাকে সভাপতি ও শামসুজ্জামান দুদুকে (বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান) সাধারণ সম্পাদক করে কৃষকদলের কমিটি গঠন করা হয়। ২০০১ সালে তারা দল থেকে বহিষ্কৃত হলে সিনিয়র সহসভাপতি মজিবুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। ২০০৮ সালে তিনিও মারা যান। এরপর কৃষকদলের তৎকালীন আরেক সহ-সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর তিনি বিএনপির মহাসচিব নির্বাচিত হন। এরপর কৃষকদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে দলের চেয়ারপারসনের কাছে তিনি চিঠি লেখেন। সেই থেকে কৃষকদলের সভাপতির পদটি শূন্য।
জানা গেছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও শামসুজ্জামান দুদুকে শীর্ষ পদে রেখেই কৃষকদলের নতুন কমিটি গঠনের আলোচনা চলছিল। এখন দু’জনই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিএনপিতে এক নেতার এক পদ নীতি বাস্তবায়ন শুরু হয়। সেক্ষেত্রে এ দু’জন নেতার কৃষকদলে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বর্তমানে কৃষকদলের নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে বিএনপির হাইকমান্ড। তবে দীর্ঘ দিন ধরে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকায় শামসুজ্জামান দুদুকে সংগঠনের শীর্ষ পদে রাখার দাবি জানান অনেকেই।
কৃষকদলের নেতৃত্বে আসার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপি ও কৃষকদলের বেশ কয়েকজন নেতা। এদের মধ্যে শীর্ষ পদের জন্য ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো: আবদুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, বিএনপি নেতা শামীমুর রহমান শামীম, মাহমুদুর রহমান সুমন, কৃষকদলের নেতা এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসেন, নূর আফরোজ জ্যোতি, মো: শাহজাহান মিয়া সম্রাট, তকদির হোসেন জসিম, মো: মাইনুল ইসলামসহ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। কৃষকদলের বর্তমান কমিটির অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসতে পারেন বলে জানা যায়।
কৃষকদলের কার্যক্রম সম্পর্কে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, অনেক দিন হয়েছে কৃষকদলের কোনো কাউন্সিল হয়নি। আমরা এ ব্যাপারে কাজ করছি। আমরা তৃণমূল থেকে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করব। ইউনিয়ন, থানা বা উপজেলা ও জেলা কমিটি শেষ করে কেন্দ্রীয়ভাবে কৃষকদলের জাতীয় সম্মেলন হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। দলের ভেতরের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা চলছে। যদি সরকারের কোনো রোষানলে না পড়ি তাহলে তিন মাসের মধ্যেই কৃষকদলের কাউন্সিল সম্পন্ন করতে পারবেন বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।