দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সরকারের আজ্ঞাবাহী আখ্যা দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দুদক অত্যাচারী মেশিন ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে গতকাল ১০৯২ দিন পর কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন জাহালম নামের একজন পাটকল শ্রমিক। নির্দোষ জাহালম এতদিন কারাগারে ছিলেন শুধু আওয়ামী সরকারের ক্ষমতা-আশ্রিত দুদকের রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে। বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশনে আসীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরকারের প্রতিহিংসা বাস্তবায়নের অত্যাচারী মেশিন ছাড়া আর কিছুই নয়। সেজন্য দুদক বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে দমন করতে গিয়ে বেপরোয়া অনাচারে লিপ্ত থেকে মনুষ্যত্বহীনতার ডালপালা বিস্তার করেছে। আর এতে নির্দোষ-নিরীহ-নিরপরাধ মানুষও দুদকের দায়ের করা মিথ্যা মামলার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। গতকাল সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার, নাজমুল হক নান্নু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে জনসভা হওয়ার কথা ছিল তা স্থগিত করা হয়েছ। ওই দিন শুধু ঢাকায় বিএনপির উদ্যোগে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বেলা আড়াইটায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে। এ ছাড়া ৯ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী একই দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে। বইমেলার কারণে এই কর্মসূচিতে পরিবর্তন এসেছে বলে জানান তিনি।
লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, ভুয়া ভোটের সরকারের চাহিদা মেটাতে গণতান্ত্রিক শক্তিকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দী করতে দুর্নীতি দমন কমিশন কাজ করছে। আর সেটির নির্মম শিকার হয়েছেন দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং অসংখ্য নেতৃবৃন্দ। এ ধরনের নির্বিচারে মামলার ধারাবাহিকতায় প্রকৃত অপরাধীকে বাদ দিয়ে নিরীহ যুবক জাহালম আটকে থাকে কারাগারে।
তিনি বলেন, এই দুদক সরকারের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়েছে। দুদক আইনি নিয়ম-কানুন না মেনে আওয়ামী সরকারের শীর্ষ ব্যক্তির নির্দেশেই দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে আটকে রাখতে মামলা সাজিয়েছে। বিরোধী শক্তিকে দমন করতে আওয়ামী অবৈধ গোষ্ঠীর একটি হাতিয়ার হলো বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশন।
তিনি আরো বলেন, এই দুদক ভুয়া ভোটের সরকারের ‘১০ বছরের মেগা দুর্নীতির কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি। যদি করতেই পারত তবে আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী-উপদেষ্টা এবং নেতারা যাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ আছে তারা আজকে প্রবল প্রতাপে দেশব্যাপী দাপিয়ে বেড়াতে পারত না। দেশের বাইরে বেগম পল্লী ও সেকেন্ড হোম গড়ে উঠত না। নিউ ইয়র্কে মন্ত্রীর ছেলের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট থাকত না। সাবেক অর্থমন্ত্রী চার হাজার কোটি টাকা চুরিকে দুর্নীতি বলতে নারাজ হতেন না। দুদকের কারণেই দেশে ক্রিমিনাল ইকোনমির আশকারা পেয়ে পত্রপল্লবে বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। জাহালমের দীর্ঘদিন কারাভোগের ঘটনায় দুদকের ভূমিকা নজিরবিহীনভাবে ন্যক্কারজনক। এ ঘটনায় দেশে একটি ক্রিমিনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ছবিই ভেসে ওঠে।