ফিলিস্তিনি ইমামের ছেলে এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত

মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী নাইব বুকেলে। বুকেলে নির্বাচনে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। গত শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চারজন প্রার্থী থাকলেও বুকেলে একাই পেয়েছেন অর্ধেকের বেশি ভোট(৫৪ শতাংশ)। অর্থাৎ তিন প্রতিদ্বন্দ্বীর সম্মিলিত ভোটের চেয়ে বুকেলে একাই বেশি ভোট পেয়েছেন।

মধ্য আমেরিকা অঞ্চলের ছোট্ট দেশ এলসালভাদর। দেশটির আয়তনে যেমন ছোট, জনসংখ্যায় কম- ৬৫ লাখ। জনসংখ্যার বেশির ভাগই দরিদ্র। ১৯৯২ সালে গৃহযুদ্ধের অবসানের পর থেকে দেশটির রাজনীতিতে চলছে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের রাজত্ব। দলদুটি হলো- ক্ষমতাসীন ফারাবুন্দো মার্তি ফ্রন্ট ফর ন্যাশানল লিবারেশন(এফএমএলএন) ও বিরোধী দল কনজারভেটিভ রিপাবলিকান অ্যালায়েন্স(এরিনা)। কিন্তু ৩৭ বছর বয়সী বুকেলে সেই দুটি দলের বাইরের প্রার্থী হয়েও বাজিমাত করেছেন। বড় দুটি দলকে টেক্কা দিয়ে আদায় করে নিয়েছেন জনগনের ম্যান্ডেট।

নাইব বুকেলের শেকড় মধ্যপ্রাচ্যে। তার পূর্ব পুরুষরা ছিলেন ফিলিস্তিনের বাসিন্দা। জেরুসালেমের বাসিন্দা ছিলো বুকেলের পূর্বপুরুষরা। ২০ শতাব্দীর শুরুর দিকে তারা মধ্য আমেরিকা অঞ্চলের দেশটিতে অভিবাসী হন। সে সময় ফিলিস্তিন ছিলো ওসমানীয় খিলাফতের অন্তর্ভূক্ত। পেশায় ব্যবসায়ী নাইব বুকেলে। তার বাবা আরমান্ডো বুকেলে কাত্তান ছিলেন রাজধানী সান সালভাদর শহরের একজন নামকরা ব্যবসায়ী ও অত্যন্ত জনপ্রিয় ইমাম।

১৯৮১ সালে জন্ম নেয়া বুকেলে রাজনীতিতে নেমেছিলেন এফএমএলএন দলের হয়েই। ২০১২ সালে এই দলটির প্রার্থী হিসেবে কাসকাতলান পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৫ সালে রাজধানী শহর সান সালভাদরের মেয়র নির্বাচিত হয়ে প্রথম জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনায় আসেন। কিন্তু কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে দল থেকে বহিষ্কৃত হন বুকেলে। তাই এবার তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন অপেক্ষাকৃত ছোট দল গ্রান্ড অ্যালায়েন্স ফর ন্যাশনাল ইউনিটি(গানা) দল থেকে। কিন্তু জনপ্রিয়তায় ছাড়িয়ে গেছেন বড় দুই দলকে।

নির্বাচনে বুকেলে একাই অর্ধেকের বেশি ভোট পাওয়ায় দ্বিতীয় দফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হবে না। বুকেলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান বিরোধী দল ন্যাশনালিস্ট রিপাবলিকান অ্যালায়েন্সের(এরিনা) কার্লোস ক্যালেজাস পেয়েছেন ৩২ শতাংশ ভোট। আর বর্তমান ক্ষমতাসীন দল মার্তি ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের(এফএমএলএন) প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুগো মার্টিনেজ হয়েছেন তৃতীয়।

সর্বোচ্চ নির্বাচনী আদালত বুকেলেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে, যদিও তার আগেই তার সমর্থকরা উল্লাস করতে শুরু করেছে। বুকেলে এই বিজয়কে সালভাদরান জনগনের বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তার প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিলো দুর্নীতি প্রতিরোধ করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সহিংসতা বন্ধ করা। যে কারণে সাধারণ ভোটাররা এই তরুণের প্রতি আস্থা রেখেছেন। মধ্য আমেরিকার অন্য দেশগুলোর মতো এলসালভাদরও খুবই অপরাধ প্রবণ। এখানে রয়েছে বড় বড় কিছু মাফিয়া গ্রুপ।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সাড়ে চার হাজার নিরপেক্ষ নির্বাচন পযবেক্ষক ছিলেন দেশটিতে নিয়োজিত। নির্বাচন পুরোপুরি অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে তাদের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। সূত্র: ডেইলি সাবাহ ও আনাদোলু এজেন্সি

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top