টি-শার্ট পরা এক কিশোরের হাত ধরে আছেন চঞ্চল চৌধুরী। তাকে প্রশ্ন করেন—‘তুমি কী আমাকে চিনো?’ হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে কিশোর গাইতে থাকে, ‘নিথুয়া পাথারে নেমেছি বন্ধুরে’ গানটি। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন চঞ্চল। এরপর কিশোরটি চঞ্চলের গাওয়া আরেকটি গানের কথা স্মরণ করার চেষ্টা করে। তখন চঞ্চল অপশন হিসেবে ‘সর্বত মঙ্গল রাধে’ গানের কথা বলেন। এ সময় ছেলেটি চঞ্চলকে গানটি গাইতে বলেন। এরপর দ্বৈতভাবে গানটির অংশ বিশেষ গেয়ে শোনান।
গুণী অভিনেতা-কণ্ঠশিল্পী চঞ্চল চৌধুরী তার ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। তাতে এমন দৃশ্য দেখা যায়। এই কিশোর চঞ্চলের ভক্ত। শুটিং সেটে চঞ্চলকে দেখে ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। এরপর চঞ্চল ছেলেটির সঙ্গে অনেকটা সময় কাটান।
এ বিষয়ে চঞ্চল চৌধুরী স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘ছেলেটির নাম হৃদয়। কিছুদিন আগে উত্তরায় এক শুটিং লোকেশনে ওর সঙ্গে দেখা, দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপরের অংশটুকু আমার মেকআপ আর্টিস্ট মোবাইল ফোনে রেকর্ড করেছিল। এত মানুষের ভালোবাসা। এটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন, শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।’
অতি প্রশংসা বা সম্মানের আরেক নাম তৈল মর্দন বলে মনে করেন চঞ্চল। এ বিষয় নিয়েও নিজের ভাবনার কথা জানিয়েছেন তিনি। এই অভিনেতা লিখেন, ‘অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। অতি প্রশংসা বা সম্মান প্রদর্শনের আরেক নাম তৈল মর্দন। যেমন: মাঝে মধ্যেই আমার পোস্টের কমেন্টে বা ইনবক্সে আমাকে ‘কিংবদন্তি’ অভিনেতা হিসেবে অভিহিত করে অনেকেই অনেক প্রশংসা করে থাকেন। তাতে আমি আনন্দিত বা গর্বিত হওয়ার চেয়ে, অনেক বেশি বিব্রত হই। সোজাসাপ্টা কথা বলি—আসলে এত বড় ‘বিশেষণ’ ধারণ করার যোগ্যতা আমার নেই। ‘অভিনেতা’ বা ‘প্রিয় অভিনেতা’ এটুকু বললেই আমি মহা আনন্দিত বা আহ্লাদিত হই।’
জীবিত থাকতে এত উপাধি-বিশেষণ প্রদান করলে, মৃত্যুর পর উপাধির অভাব হবে। বিষয়টি উল্লেখ করে এই অভিনেতা লিখেন, ‘‘সকলের অবগতির জন্য বলি, জীবিত কালেই যদি সকল ‘উপাধি’ এবং ‘বিশেষণ’ প্রদান শেষ হয়ে যায়, তাহলে মৃত্যুর পরে দেবার মতো এরকম ‘বিশেষণ’ বা ‘উপাধি’-এর আকাল হবে। একজন মানুষকে অতি প্রশংসায়, এমন উঁচুতে কখনো তোলা উচিত নয়, যাতে সেখান থেকে পড়ে গিয়ে তার হাত-পা ভেঙে যায়। কারণ একজন মানুষ যত বেশি প্রশংসিত হন, তার গালি খাওয়ার রাস্তাটিও ততই সু-প্রশস্ত হয়। আমার কাছে সবচেয়ে বড় উপাধি ‘একজন ভালো মানুষ’।’’