‘পুলিশ জনতা ঐক্য গড়ি, মাদক-জঙ্গি নির্মূল করি’ স্লোগানে আজ শুরু হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৯। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে বর্ণাঢ্য পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন। তিনি সারা দেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ১১টি কন্টিনজেন্ট এবং পতাকাবাহীদলের নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করবেন।
এবারের পুলিশ সপ্তাহে প্যারেড অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেবেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি আবিদা সুলতানা। তার নেতৃত্বে পরিচালিত প্যারেডে অংশ নিচ্ছেন সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জননিরাপত্তা বিধানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ‘শৃঙ্খলা নিরাপত্তা প্রগতি’ মন্ত্রে দীক্ষিত বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ আইনেরশাসন প্রতিষ্ঠায় দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জঙ্গিবাদ দমন ও মাদক নির্মূলে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন, যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।’
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে উল্লেখ করেছেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশের দক্ষতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশের সব প্রয়োজন ও সঙ্কটকালে বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের পুলিশ বাহিনীর সাফল্য ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বাংলাদেশকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বিগত ২০১৮ সালে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৪০ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), ৬২ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’ এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ১০৪ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা’ এবং ১৪৩ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা’ প্রদান করা হবে।
ইন্সপেক্টর মরহুম মো: জালাল উদ্দিন পিপিএম এবং কনস্টেবল মরহুম মো: শামীম মিয়া এ দু’জনকে বিপিএম-মরণোত্তর পদক প্রদান করা হয়েছে। তাদের পদক পরিবারের সদস্যরা গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী পদকপ্রাপ্তদের পদক প্রদান করবেন।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) এর স্টল পরিদর্শন এবং পুলিশ সদস্যদের সাথে কল্যাণ প্যারেডে অংশগ্রহণ করবেন। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতার চ্যানেলগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
পুলিশ সপ্তাহের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতির ভাষণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর সম্মেলন, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মেলন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের সাথে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীবদের সম্মেলন, আইজি’জ ব্যাজ, শিল্ড প্যারেড, অস্ত্র-মাদক উদ্ধার প্রভৃতি পুরস্কার বিতরণ, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের সাথে কর্মরত পুলিশ অফিসারদের পুনর্মিলনী, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আইজিপির সম্মেলন এবং বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা ইত্যাদি।
আগামী ০৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধসংক্রান্ত মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে পুলিশ সপ্তাহের নানা আয়োজনের। পুলিশ সপ্তাহে বিগত এক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরবর্তী বছরের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়।