ফিফা ক্রমতালিকায় ৫৩ নম্বরে রয়েছে ইকুয়েডর। অন্যদিকে, আর্জেন্টিনা রয়েছে আট নম্বরে। কিন্তু চলতি আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে যথেষ্ট ভুগিয়েছে ইকুয়েডর। তবে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসলেন মেসিরাই।
রবিবার (৪ জুলাই) সকালে গোইয়ানিয়ার অলিম্পিকো স্টেডিয়ামে ইকুয়েডরের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জয়লাভ করলেন মেসিরা। আর সেইসঙ্গে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল নীল-সাদা ব্রিগেড। এই জয়ে টানা চতুর্থবারের মতো শেষ চারে গেল আর্জেন্টিনা। সেমিফাইনালে তাদের খেলতে হবে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে।
আর্জেন্টিনা দলের হয়ে একটি করে গোল করেন রড্রিগো ডি পল, লৌতারো মার্টিনেজ ও লিওনেল মেসি। তবে অসধারণ এক ফ্রি-কিক থেকে নিজে একটি গোল করার পাশাপাশি অপর দুই গোলেও অবদান রাখেন মেসি। চলতি কোপা আমেরিকার টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত মেসি ৪টি গোল ও সমান অ্যাসিস্ট করেছেন। যা এবারের আসরে সর্বোচ্চ।
‘শাপমোচন’। এবার কোপার শেষ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথমার্ধে লিওনেল মেসির জন্য এর থেকে ভালো কোনও শব্দ হয় বলে মনে হয় না। কারণ ম্যাচের ২২ মিনিটে নিশ্চিত একটা গোলের সুযোগ নষ্ট করেছিলেন মেসি। কার্লোস গ্রেসোর ব্যাকপাস সোজাসুজি চলে এসেছিল মেসির কাছে। তিনি প্রথমে বুক দিয়ে বলটা নামিয়ে ছিলেন। শুধুমাত্র ইকুয়েডরের গোলরক্ষককে পরাস্ত করলেই গোল ছিল অনিবার্য। ঠিক এমনই এক মাহেন্দ্রক্ষণে মেসির শট গিয়ে লাগল বারপোস্টে।
তবে প্রথমার্ধে নিজেই নিজের সেই ভুল শুধরে নিলেন মেসি। ৩৯ মিনিটে রড্রিগো ডি পল তিনি গোল করার জন্য বলটা উপহার হিসেবে তুলে দিলেন তিনি। পুরো লড়াইটা তৈরি করলেন মেসি নিজেই। তিনি গঞ্জালেসের দিকে বলটা বাড়িয়ে ইকুয়েডরের রক্ষণভাগটা খুলে দেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ইকুয়েডরের গোলরক্ষক গ্যালিন্ডাস খানিকটা বাইরের দিকে বের হয়ে এসেছিলেন। এদিকে, মেসি বাঁ প্রান্ত ধরে বক্সের একদম ধারে চলে আসেন। সেখানে থেকে তিনি বলটা ডি পলের দিকে বাড়িয়ে দেন। আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডারের ছোঁয়ায় ১-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
তবে একথা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে ম্যাচের প্রথমার্ধে দুই দলই যথেষ্ট ফিজিক্যাল ফুটবল খেলেছে। দুই দলের মোট চারজন ফুটবলারকে দেখতে হয়েছে হলুদ কার্ড। পাশাপাশি দুটো দলই হারিয়েছেন বেশ কয়েকটা গোলের সুযোগ। ইকুয়েডর দলের অধিনায়ক ভ্যালেন্সিয়া প্রথমার্ধে মোট দুইটি গোলের সুযোগ হারান। ৪৫ মিনিটের মাথায় সহজ সুযোগ মিস করেছেন আর্জেন্টিনার নিকোলাস গঞ্জালেসও। মেসির ফ্রি-কিক থেকে তিনি মাথার একটা ছোট্ট টোকায় গোল করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু গ্যালিন্ডেজ দুরন্ত একটা সেভ করে সেইযাত্রায় দলকে বাঁচিয়ে দেন।
প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধের পরের ৪৫ মিনিটেও ইকুয়েডর বেশ কয়েকটা বিক্ষিপ্ত আক্রমণ তুলে আনে। কিন্তু তেমন কোনও লাভ হয়নি। তবে আবারও দেখা যায় মেসি ম্যাজিক। ৮৪ মিনিটে লৌতারো মার্টিনেজকে বলটা ক্রস করে পাঠিয়ে দেন মেসি। পেনাল্টি অঞ্চলের মধ্যে মেসির থেকে বল পাওয়ার পর কোনও ভুল করেননি মার্টিনেজ। গ্যালিন্ডাজকে সহজেই তিনি পরাস্ত করেন। ২-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
তবে নাটকের শেষ হিসাব তখনও বাকি ছিল। ৮৯ মিনিটের মাথায় ডি মারিয়াকে ফাউল করে লালকার্ড দেখেন ইকুয়েডরের হিনকাপি। তবে পেনাল্টি না পেলেও ফ্রি-কিক অবশ্যই অর্জন করে নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ফ্রি-কিক নিতে এসেছিলেন মেসি। ম্যাচের প্রথম দুই গোলে তিনি অ্যাসিস্ট করেছিলেন। অবশেষে কি তার পা থেকে বেরিয়ে আসবে সেই কাঙ্খিত গোল?
আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মধ্যে এই একটা প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছিল। নিরাশ করেননি মেসি। তার বাঁকানো শট ইকুয়েডরের প্রাচীরের ওপর দিয়ে বিপক্ষের জালে জড়িয়ে যায়। সেইসঙ্গে চলতি টুর্নামেন্টে চতুর্থ গোলটা করে ফেলেন লিওলেন মেসি। আর আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় ৩-০ গোলে। এরপর রেফারির শেষ বাঁশিতে জয় নিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। এই নিয়ে টানা ১৮ ম্যাচে অপরাজিত থাকল আর্জেন্টিনা।