মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা বন্ধ করতে রাজি নয় ইরান। এবার এই নিয়ে ইউরোপকে হুমকি দিলেন ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডসদের উপপ্রধান। শনিবার সেদেশের জাতীয় টিভি চ্যানেলে ডেপুটি কম্যান্ডার ব্রিগেডিয়ার-জেনারেল হোসেন সালামি বলেন, ‘যদি ইউরোপীয়রা বা অন্য কেউ ইরানকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা থেকে নিরস্ত্র করার চক্রান্ত করে, তাহলে আমরা কৌশলগত অবস্থান নিতে বাধ্য হব। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।’ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কোনও আলোচনা, সুপারিশ বা অনুরোধ বরদাস্ত করা হবে না বলেই দাবি তার।
শনিবারই ১,৩৫০ কিলোমিটারেরও বেশি পাল্লার নতুন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে ইরান। আত্মরক্ষার খাতিরেই ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছে ইসলামিক দেশটি।
২০১৫ সাল বিশ্বের পরমাণু অস্ত্রে বলীয়ান দেশগুলির সঙ্গে চুক্তি করেছিল ইরান। তারপরেও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে গবেষণা বন্ধ করেনি তারা। গত বছর মে মাসে চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা। ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা নিয়েই মূলত আপত্তি তুলেছে ট্রাম্প সরকার। তবে ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে এখনও চুক্তি রয়েছে ইরানের। যদিও বেশ কিছু দেশের সরকার চুক্তিতে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও ইয়েমেনসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংঘর্ষ নিয়ে নতুন ধারা যুক্ত করার দাবি তুলেছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতেই ইরান সেনার উপপ্রধান এই হুমকি দিয়েছেন বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। এখন পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ২,০০০ কিলোমিটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে ইরান। এই পাল্লার মধ্যেই রয়েছে ইরানের চিরশত্রু ইসরাইল ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনার ঘাঁটিগুলো।
রুশ-মার্কিন পরমাণু চুক্তি বাতিলে বিশ্বে শুরু হচ্ছে নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা
এএফপি
রাশিয়ার সাথে করা ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে গেলে বিশ্বব্যাপী নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্র তার পরমাণু অস্ত্রকে আরো আধুনিকায়নেরও সুযোগ পাবে।
গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার থেকে পরমাণু চুক্তিটির প্রতি দায়বদ্ধ না থাকা এবং ছয় মাসের মধ্যে এর থেকে সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেন। এর একদিন পর প্রেসিডেন্ট পুতিন আইএনএফ স্থগিত করার কথা ঘোষণা করেন।
ন্যাটো জানিয়েছে, এই চুক্তি থেকে প্রত্যাহারের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তার মিত্রদের ‘পূর্ণ সমর্থন’ রয়েছে। পাশাপাশি ন্যাটো এও জানিয়েছে, রাশিয়ার ৯এম ৭২৯ স্থল থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পদ্ধতি এই চুক্তির লঙ্ঘন বলে যুক্তরাষ্ট্র যে অভিযোগ করেছে তার সাথেও তারা একমত পোষণ করছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ‘নতুন ধরনের অস্ত্র বানাতে ও পারমাণবিক অস্ত্রের আধুনিকায়ন’ করার জন্য পাল্টা এই চুক্তি থেকে রাশিয়াকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ওয়াশিংটন ‘একতরফাভাবে এবং সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে’ এই চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ দিন ধরেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে চুক্তিটির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছে। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যেই তার অস্ত্রভাণ্ডার আধুনিকায়ন করার ঘোষণা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার নতুন পরমাণু নীতি ঘোষণা করে তখনই দেশটি সতর্ক করে বলেছিল, তারা দু’টি নতুন অস্ত্র ক্রয়ের পরিকল্পনা করছে। একটি নতুন ধরনের কম ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ও একটি নতুন ধরনের ক্রুজ মিসাইল, যা আইএনএফ চুক্তির লঙ্ঘন। তবে পেন্টাগন জানিয়েছে, তখনই চুক্তির লঙ্ঘন হবে, যখন অস্ত্রগুলো মোতায়েন করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই জোর দিয়ে বলে আসছে যে, ১৯৮৭ সালে মস্কোর সাথে করা চুক্তিতে অস্ত্রের গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।
মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা চীনের
এ দিকে রয়টার্স জানায়, মার্কিন সরকার রাশিয়ার সাথে ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি বা আইএনএফ চুক্তি বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার বিরোধিতা করেছে করেছে চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং এক বিবৃতিতে আইএনএফ চুক্তির ব্যাপারে ‘গঠনমূলক’ আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে চীন। সেইসাথে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সঠিকভাবে মতপার্থক্য নিরসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। শুয়াংয়ের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের ফলে ধারাবাহিক নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনবে। মার্কিন সরকার আইএনএফ চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে সমরাস্ত্র প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে বলে ইউরোপ ও রাশিয়া এর আগে যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তার পুনরাবৃত্তি করেন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র।