মাত্র পাঁচটি ওভার আগেও যারা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচটি দেখছিলেন, তারা কি কল্পনাও করতে পেরেছিলেন ম্যাচের ফলাফলটা এমন হবে? হ্যাঁ, যারা পাকিস্তান ক্রিকেটের একনিষ্ঠ ভক্ত, তারা হয়ত কিছুটা সংশয়ে ছিলেন কারণ দলটি যে পাকিস্তান! তারা যেকোনো সময়, যেকোনো কিছু করে ফেলতে পারে। হেরে যাওয়া ম্যাচ জিততে পারে, আবার উল্টোচিত্রও হতে পারে। এই উল্টোচিত্র দেখেই বেশি অভ্যস্ত ভক্তরা। জয় যখন হাতছানি দিতে থাকে, তখনই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। চোখজোড়া বিশ্বাস করতে চায় না। দীর্ঘশ্বাসে বেরিয়ে আসে একটি প্রশ্ন, আর কত এভাবে হারবে পাকিস্তান?
তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-২০’তে আজ মাঠে নেমেছিল পাকিস্তান। সাত রানে হেরে মাঠ ছেড়েছে। এর আগে প্রথম টি-২০’তে ছয় রানে হেরেছিল। ফলে সিরিজ জিতে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
কিন্তু ফলাফলটা কি এমন হওয়ার কথা ছিল?
টস জিতে আজ ফিল্ডিং করতে নামে পাকিস্তান। কারণ আবহাওয়ার খবরটা আগেই জেনেছিল দল। তাই এই সিদ্ধান্ত।
ব্যাট করতে নেমে ১৭ ওভারের পর বৃষ্টির কবলে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। পরে বৃষ্টি থামলে নির্ধারিত ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ১৮৮ রান।
সর্বোচ্চ ৬৫ রান করেছেন নতুন অধিনায়ক ডেভিড মিলার। এছাড়া ৪৫ রান করেছেন ভ্যান ডার ডুসেন।
১৮৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দলীয় ৪৫ রান সাজঘরে ফিরেন ওপেনার ফখর জামান। ১৪ রানে হ্যানড্রিকসের বলে বিদায় নেন তিনি।
এরপর ক্রিজে থাকা বাবর আজমের সাথে জুটি বাধেন হুসেইন তালাত। এই জুটির তালমিলে দলের সংগ্রহ দ্রুত বাড়তে থাকে। অর্ধশত করে শতকের পথে হাঁটতে থাকেন বাবর। আর হুসেইনও ব্যক্তিগত সংগ্রহ বাড়াতে থাকেন।
এই জুটির পার্টনারশিপের সেঞ্চুরি যখন হলো, দলের জয়টা তখন সময়ের ব্যাপারই মনে হয়েছিল। কিন্তু পরের ওভারের প্রথম বলেই বিপত্তি হলো। হ্যানড্রিকসের বলে ৯০ রানে সাজঘরে ফিরলেন ব্যাটে আগুন ঝরানো বাবর আজম। ৫৮ বলে ১৩টি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কার অনবদ্য একটি ইনিংস খেলেছেন তিনি।
বাবর ফিরতেই দৃশ্য পাল্টে গেলো। সহজ জয়টা কঠিন হয়ে দাঁড়ালো।
আসিফ আলি হুসেইনের সাথে জুটি বেঁধে মাত্র তিনটি বলে খেলে সাজঘরে ফিরলেন।
ক্রিজে এলেন অধিনায়ক শোয়েব মালিক। হুসেইনের সাথে জুটি বেঁধে এক ওভারও খেলা হলো না তার। পরের ওভারে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ফিফটি করার পরই মরিসের বলে সাজঘরে ফিরলেন হুসেইন তালাত।
জয়টা আরো কঠিন হয়ে গেলো পাকিস্তানের। ইমাদ ওয়াসিম ক্রিজে এলেন। শোয়েবের সঙ্গী হলেন। তিন বল খেলে তিনিও বিদায় নিলেন।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে প্রয়োজন ১২ রান। শোয়েবের সাথে জুটি বাঁধলেন হাসান আলি।
প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকালেন শোয়েব। পরের বলে এক রান নিয়ে প্রান্ত বদল করলেন। হাসান স্ট্রাইকে। এক রান নিয়ে শোয়েবকে স্ট্রাইকে ফিরিয়ে দিলেন।
প্রয়োজন তিন বলে নয় রান। শোয়েব থাকতে সেটা কঠিন ছিল না তেমন। কিন্তু ফেলুকাউয়ের বলে ডুসেনের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে গেলেন অধিনায়ক। শেষ হলো জয়ের স্বপ্ন। হারটা তখন দুই বলের অপেক্ষায়।
পরের বলে হাসান সাজঘরে ফিরলেন। আর শেষ বলে মোহাম্মদ রেজওয়ান এক রান নিয়ে হারের ব্যবধান এক রান কমালেন।
ক্রিকইনফোর ধারাভাষ্যকারের ভাষ্য, ‘কী ম্যাচ ছিল এটা! কী ছিল! ম্যাচটি বিশ্বকাপ ফাইনালের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না।’
আসলেই যারা ম্যাচটি দেখেছেন, তারা তার সাথে একমত হবেন ’ম্যাচটি বিশ্বকাপ ফাইনাল হওয়ার যোগ্য ছিল।’