শেরপুর জেলায় প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৫ এপ্রিল। সেই থেকে চলতি বছরের মে মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৯৯ জন। আর জুন মাসে এই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭২১ জন।
এছাড়া মে মাস পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। আর শুধু জুন মাসে মারা গেছেন ৩১ জন। একই মাসে করোনার লক্ষণ নিয়ে মারা গেছেন অন্তত আরও ১০ জন। করোনা শুরুর পর থেকে মে মাস পর্যন্ত হাসপাতালের সরকারি আইসোলেশন থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন মোট এক হাজার ৪৪০ জন। আর চলতি বছরের শুধু জুন মাসেই সরকারি আইসোলেশনে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬০০ জন।
অন্যান্য উপজেলার তুলনায় করোনা পরীক্ষা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায় শেরপুর সদর অনেক এগিয়ে। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এ বছরের মে মাস পর্যন্ত শেরপুরের করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও চলতি জুন মাস শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। অন্যান্য উপজেলায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সদরের অবস্থা নাজুক হয়ে উঠছে। এ নিয়ে সদর উপজেলার সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। জুন মাসটিকে শেরপুরের মানুষ ‘ভয়ংকর জুন’ হিসেবে দেখছে। তবে গত ১১ জুন থেকে এখন পর্যন্ত শেরপুরে ৯ দফা কথিত কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।
শেরপুর স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে গত ২৬ জুন জেলায় আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৫ জুন। ২০ জুন ছিল শেরপুর জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্তের দিন।এই দিন শেরপুর জেলায় ৬১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ৬১ জনের মধ্যে সদর উপজেলাতেই রয়েছে ৫৫ জন। এর আগের দিন ১৯ জুন ৩৪ জনের মধ্যে সদরের আছেন ৩০ জন। জুন মাসের মোট আক্রান্ত হিসাবের বিবেচনায় শতকরা ৮২ ভাগ রোগী সদর উপজেলার।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে জুন মাসে যত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এত রোগী আগে কখনো ভর্তি হয়নি। প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই সর্দি জ্বর রোগীর খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষার আওতায় আসছে খুব কম। সর্দি জ্বর আক্রান্ত রোগীরা মিশে যাচ্ছে মানুষের সাথে।
সরকারি হিসাব মতে, সদর বাদে অন্যান্য উপজেলার মানুষের করোনা পরীক্ষার হার খুব কম। ফলে আক্রান্তের সঠিক হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যান্য উপজেলায় আক্রান্ত থাকলেও পরীক্ষার আওতায় না আসার প্রবণতা কম।সব মিলিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শেরপুর জেলা বিশেষ করে সদরের করোনা রোগী।
সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালে অন্য রোগের কারণে ভর্তি হওয়া রোগীদের পরীক্ষা করলেই পাওয়া যাচ্ছে করোনার অস্তিত্ব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে বেশ কিছু শিশু কিশোর ও যুবক রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন যুবক-তরুণী করোনায় মারা গেছেন। এ নিয়ে শেরপুরের সর্বত্র করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলা হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আলমগীর মোস্তাক জানিয়েছেন, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ রোগীই করোনা আক্রান্ত। কিন্তু পরীক্ষায় আসতে চায় না।
সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোবারক হোসেন বলেন, সামজিক সচেতনতা কম, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের সাথে অবাধে গণপরিবহনে যাতায়াত এই সংক্রমণকে আরও বাড়িয়েছে।
জেলার সিভিল সার্জন একেএম আনওয়ারুর রউফ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, অবস্থা নিয়ন্ত্রণে সরকার ইতিমধ্যেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। সরকারি ব্যবস্থার সাথে নিজস্ব উদ্যোগে পাড়ায়-মহল্লায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।