পরীক্ষা এখন মানসিক যন্ত্রণার নাম!

গেল বছরের মার্চ মাসে করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। করোনা শনাক্তের হ্রাস-বৃদ্ধি বিদ্যাপীঠ খোলার সিদ্ধান্তে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

দীর্ঘদিন একাডেমিক কাজ স্বাভাবিকভাবে চলতে না পারায় শিক্ষার্থীদের পড়তে হয়েছে সেশনজটে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল গত বছরের ডিসেম্বরে হল না খুলে পরীক্ষা গ্রহণের কথা জানায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করলে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। এরপরে বিভিন্ন বিভাগে রুটিন প্রকাশ, আবার স্থগিত, কখনো অনলাইনে, কখনো সরাসরি, কখনো টিকা ইস্যুতে আটকে গেছে পরীক্ষা। বার বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে পরীক্ষা এখন মানসিক যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র আরিফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে বার বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে আমাদের প্রস্তুতিতে নানামুখী সমস্যায় ফেলছে। বিশেষ করে যখন সবকিছু গুছিয়ে ফেলার পর শুনি পরীক্ষা হবে না, তখন মনে হয় পরীক্ষাটাই মানসিক যন্ত্রণা। কারণ সেশনজটে পড়েছি, আবার চাকরিতেও ঢুকতে পারছি না।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত (১৫ জুন থেকে) সরাসরি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণায় অনেক শিক্ষার্থী ঢাকায় আসে। বিজ্ঞান অনুষদের বেশ কয়েকটি বিভাগে সরাসরি মাস্টার্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ফরম ফিল আপ করতে হবে বিবেচনায় অধিকাংশ বিভাগ জুলাইয়ে পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করে। কিন্ত ফের সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণায় আবারও স্থগিত হয়ে পড়ে পরীক্ষা কার্যক্রম। হল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন জায়গায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা আটকে পড়ে যায়।

বিশ্বধর্ম সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রিদুয়ান বলেন, ৪ জুলাই থেকে আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিই। ঢাকায় আসি। যাতায়াত খরচও বেশি হচ্ছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে। হল বন্ধ থাকায় ঢাকায় আবাসন নিয়েও সংকটে পড়তে হয়েছে। কিন্তু সব উপেক্ষা করে প্রস্তুতি নিলাম। এখন বিভাগ থেকে বলা হল পরীক্ষা হবে না। এখন কঠোর লকডাউনের কারণে আমাদের অনেকে আটকা পড়েছে। অনেকে চলে গেছে। এটা আমাদের জন্য ভোগান্তি।

এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোভিড সিচুয়াশেনে পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে বিভাগের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক গ্রুপে আলোচনা হয়। ২০৬ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৫০ জন অনলাইনে পরীক্ষার পক্ষে মতামত দেয়। আর ৩০ জন সরাসরি পরীক্ষায় ভোট দেয়। বাকিদের অনলাইন বা সরাসরি কোনোটাতে সমস্যা নেই।

চতুর্ষ বর্ষের ছাত্র ইমাম বলেন, আমাদের পরীক্ষাটা হয়ে যাক সেটাই চাই। আর কোনো ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে চাই না।

রুটিন প্রকাশের স্থগিত হওয়া এরকম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগে হয়েছে। বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ৪ জুলাই। কিন্তু বিভাগের সভায় সেটি স্থগিত করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক  বলেন, ৪ তারিখ থেকে সরাসরি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। বিভাগের সেরকম প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু নতুন করে লকডাউনের ঘোষণায় সেটি স্থগিত করা হয়। এখন অনলাইনে পরীক্ষা নিতে প্রস্তুতি নিতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত ট্রেনিংয়ের বিষয় আছে।

তবে, পরীক্ষা নিয়ে বিভাগ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

Share this post

scroll to top