জবি ছাত্রলীগের দুই দলের দফায় সংঘর্ষ : কমিটি স্থগিত

ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বের ঘটনা জের ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই দলের দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি বাস ভাঙচুর ও ১৫ ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়।

সংঘর্ষের চলাকালে ক্যাম্পাসে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও সহকারী অধ্যাপক শাহীন মোল্লাসহ প্রক্টরিয়াল বডির কয়েকজন সদস্য আহত হন।

হেলমেট পরিহিত ছাত্রলীগের দুই দলের কর্মীরা লোহার রড, লাঠি, হাতুড়ি, চাপাতি, বটিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং দলীয় শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে নেতৃবৃন্দের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার ঘাটতি পরিলক্ষিত হওয়ার অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করেছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন তথ্যটি নিশ্চিত করেন। এছাড়া ঘটনা তদন্ত করতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে আছেন সোহান খান, আরেফিন সিদ্দিক সুজন, আল নাহিয়ান খান জয়, ইয়াজ আল রিয়াদ।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, জবি ছাত্রলীগের দুই দলের সংঘর্ষের ঘটনায় কমিটি স্থগিত করা হয়েছে এবং ঘটনা অধিকতর তদন্তের জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা যায়, প্রেম ঘটিত তুচ্ছ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের কর্মী আসম আইয়ুব তুহিনের ওপর ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাসান মুন, ১৩ ব্যাচের কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল রিফাতসহ কয়েকজন মারধর করে। পরে সন্ধ্যায় সভাপতি তরিকুল ইসলামের কর্মী মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান নয়ন ও রিফাত তুহিনকে সুমনা হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে আসলে তাদের ওপর সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের কর্মীরা হামলা চালায়। এর জেরে রোববার সকাল সাড়ে আটটার দিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পদকের কর্মীরা একত্রিত হয়ে ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারের সামনে ও বিজ্ঞান ভবনের চত্বরে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে মহড়া দেয়ার সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা একে অপরকে ধাওয়া পাল্টা দেয়।
এসময় দুই দলের কর্মীরা লাঠসোটা, লোহার রড, হাতুড়ি, চাপাতি, বটিসহ একে অপরকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়ে। সভাপতির কর্মীরা সাধারণ সম্পাদকের কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাসের পিছনের গেট দিয়ে বের করে দেয়। সভাপতির কর্মীরা ক্যাম্পাসের ভিতরে অবস্থান নেয়। সাড়ে এগারটার দিকে সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলে সভাপতির কর্মীরা তাদের আবার ধাওয়া করে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মাঝখানে পড়ে যায়। সহকারী প্রক্টর শাহীন মোল্লাসহ কয়েকজন ইটের আঘাতে আহত হন।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, বিজ্ঞান ভবন ও ক্যান্টিনের সামনে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ক্যাম্পাসের ভিতরে দাঁড়িয়ে থাকা চারটি বাস ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ইটের আঘাতে ভাঙচুর হয়। দুপুর একটার দিকে ক্যাম্পাসের ভিতরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হলে সাধারণ সম্পাদেকর কর্মীরা আবার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে আসলে সভাপতির কর্মীরা তাদের ওপর আবার হামলা করে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক ভবনের নিচে পরিসংখ্যান বিভাগের শ্রেণীকক্ষের দরজা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষের সময় অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী হেলমেট পরিহিত ছিল। তারা ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মোটরবাইকে থাকা হেলমেটে জোর করে কেড়ে নেয়। এদিকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় রফিক ভবন ও অবকাশ ভবনের বারান্দায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে থাকলে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের ওপরও ইটপাটকেল ছোড়ে। অবকাশ ভবনের তৃতীয় তলা সাংবাদিক সমিতি থেকে সাংবাদিকরা ঘটনার ছবি ও ভিডিও করতে চাইলে ছাত্রলীগের মেয়ে কর্মীরা সমিতির ভিতর প্রবেশ করে সাংবাদিকদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।

সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মী খালিদ মাহমুদ সুযন (১৩ তম ব্যাচ), সামসুল হুদা গাজী (১৩তম ব্যাচ), মামুন (১২তম ব্যাচ), মাহফুজ (১২তম ব্যাচ), প্রান্ত (১২তম ব্যাচ), রেজওয়ান, ইশরাক চৌধুরী (১৪তম ব্যাচ), নোমানসহ ১৫ ছাত্রলীগ কর্মী আহত হন। তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, সুমনা হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল, মিডফোর্ট হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।

জবি ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার মেয়েলি একটা বিষয় নিয়ে সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে মারধর করে। রোববার এ ঘটনার সমাধানে আমাদের নিজেদের মধ্যে বসার কথা ছিল। কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা তার আগেই আমার কর্মীদের উপর হামলা করেছে। আমি অসুস্থ্য থাকার কারণে ক্যাম্পাসে না আসায় পরে আমার ছেলেরাও সাধারণ সম্পাদকের কর্মীদের ধাওয়া করে। পরে ক্যাম্পাসে সিনিয়র নেতাদের পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি।

জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল বলেন, পূর্বঘটনার জেরে মারামারির সূত্রপাত হয়। আমার কর্মীদের ওপর সভাপতির কর্মীরা আক্রমণ করে। আজকের ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নিবে। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।

কোতয়ালী জোনের ডিসি বদরুল হাসান বলেন, ক্যাম্পসে ছাত্রলীগের দুই দলের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলার সময় আমরা মাঝখানে অবস্থান নেই এবং দুই পক্ষকে আলাদা রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এ সময় ক্যাম্পাসের ভিতরে ও বাহিরে অতিরিক্ত দুই প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে আলোচনা করে আগামীকাল জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top