চেয়ারম্যানকে তালাক দিয়ে প্রেমিকের ঘরে সেই কিশোরী

অষ্টম শ্রেণির সেই শিক্ষার্থী নাজমিন আক্তার নাজনিন (১৪) চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে (৬০) তালাক দিয়ে প্রেমিক রমজান হালাদারকে (১৯) বিয়ে করেছেন। শনিবার সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় কাজি মো. আবু সাদেককে ডেকে চেয়ারম্যানকে তালাক দেয়ার পর রবিবার প্রেমিক রমজানের মামার বাড়িতে বসে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠিকতা সম্পন্ন হয়।

এ দিকে চেয়ারম্যাকে তালাক দেয়ার বিষয়টি এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কনকদিয়া ইউনিয়নের এক বসিন্দা বলেন, কিশোরীকে বিয়ে করে বিপাকে পড়ে বাধ্য হয়ে তালাক নিয়েছেন। বাল্যবিয়ের অপরাধে চেয়ারম্যানের বিচার হওয়া উচিৎ।

ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২১ জুন অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার প্রথম স্ত্রী আছেন। সেই সংসারে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে বিবাহিত।

এলাকাবাসী জানায়, কনকদিয়া ইউনিয়নের নারায়নপাশা গ্রামের সুলতান হাওলাদারে ছেলে রমজান হাওলাদারের সঙ্গে একই ইউনিয়নের চুনারপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের মেয়ে নাজমিন আক্তার নাজনিন ওরফে নছিমন বেগমের প্রেমের সম্পর্ক হয়। নাজনিন কনকদিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।

এক পর্যায়ে তারা প্রেমের টানে ঘর ছাড়ে। কিন্তু এ সম্পর্ক কোনোভাবেই মেনে নিতে না পারায় নাজনিনের বাবা নজরুল ইসলাম যুবক রমজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের কাছে নালিশ করেন। চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার শুক্রবার এ বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষকে সালিস বৈঠকে ডাকেন। বৈঠকে নাজনিনকে দেখে পছন্দ হয়ে যায় চেয়ারম্যানের।

এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে নাজনিনকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে রাজি হয়ে যান নাজনিনের বাবা নজরুল ইসলাম। পরে জুমার নামাজের পর কনকদিয়ার আয়লা বাজার এলাকায় চেয়ারম্যানের নিজ বাসভবনে কাজি ডেকে পাঁচ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

সালিসে এমন বিচার পেয়ে ছাত্রীর সঙ্গে পালানো যুবক নজরুল ইসলাম (১৯) আত্মহত্যার চেষ্টা করে শুক্রবার রাতে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন।

নাজনিন বলেন, চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম পছন্দের মানুষটিকে বিয়ে করতে। কিন্তু বিয়ে করতে হয়েছে চেয়ারম্যানকে। আমি এক রাত চেয়ারম্যানের বাসায় থাকলেও কোনোভাবেই তাকে আমি স্বামী হিসেবে মেনে নেইনি। চেয়ারম্যান বিষয়টি বুঝতে পেরে তালাক কার্যকর করার ব্যবস্থা করেন। রবিবার প্রেমিক রমজান হাওলাদার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে ফিরে এলে বেলা ১১টার দিকে তার সঙ্গে বিয়ে হয়। তিনি এখন মনের মানুষের মনের ঘরের বাসিন্দা।

ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার বলেন, কোনোভাবেই মেয়েটির বাবা ওই ছেলেটির কাছে দিতে রাজি ছিল না। তাই কাজি ডেকে বিয়ে করেছিলাম। যেহেতু মেয়েটি ভালোভাবে বিয়েটি নেয়নি, তাই যিনি বিয়ে পরিয়েছেন সেই কাজি ডেকেই শনিবার সন্ধ্যায় মেয়েটি আমাকে তালাক দিয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। যদি ঘটনাটি বাল্যবিয়ে হয় তাহলে উভয়ই শাস্তি পাবে।

Share this post

scroll to top