আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি গভীরভাবে খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। বর্তমান গুরুতর অসুস্থতার বিষয়টিকে আমলে নিয়ে তার উন্নত চিকিৎসার বিষয়টিতে ছাড় দেবে সরকার— সেক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের বিকল্প কোথাও। খবর-বাংলা ট্রিবিউন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে তৎপর বিএনপি। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চ মহলে যোগাযোগ করা হলেও ফলপ্রসূ কোনও উন্নতি ঘটেনি। শুক্রবার (২৫ জুন)পর্যন্ত বিএনপি-প্রধানের পরিবার বা দলের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন করা হয়নি। তবে আগামীকাল শনিবার (২৬ জুন) নাগাদ আবেদনের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হতে পারে। সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুরো বিষয়টি দেখভাল ও সমন্বয় করছেন। গত ২২ জুন সংবাদ সম্মেলন করে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য যা কিছু সরকারের করা দরকার, সরকারের করা উচিত ইমিডিয়েটলি। তারপরের যে স্টেপগুলো আছে পরবর্তীতে আলাপ-আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।’
সেই আলোচনা কতদূর, এমন প্রশ্নে শুক্রবার দুপুরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘না ভাই, এখনও কিছু হয়নি। হলে জানাবো।’
বিএনপির সঙ্গে আলোচনা বা আবেদনের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমার কাছে কোনও আবেদন আসেনি। আর এটা তো আলোচনাতেই হবে।’
২০২০ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়েছিলেন খালেদা জিয়া, এবারও কী সেই প্রক্রিয়ায় যাবে— এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এভাবেই তো হবে। কারণ, আলোচনা চাইলে তো এখন সেটা প্রাইম মিনিস্টার বা আইনমন্ত্রীর কাছে যেতে পারে। না-হলে তো কোর্টে যেতে হবে।’
২০২০ সালের মার্চে খালেদা জিয়ার শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পর বিদেশে চিকিৎসার জন্য মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিল তার পরিবার। পরে দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের ৫ মে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে লিখিত চিঠি দেন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার। যদিও সরকার তাতে এখনও সাড়া দেয়নি। আইন মন্ত্রণালয় সেটি খারিজ করে দেয়।
জানতে চাইলে শুক্রবার (২৫ জুন) রাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘তারা তো আবেদন করেছিল, যেটি আইনি বিবেচনায় বাতিল হয়েছে। এখন নতুন আবেদন পাইনি। এটা তো তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করবে, এরপর আমার কাছে আসবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে চিকিৎসকরা তার লিভারের যে সমস্যাটিকে চিহ্নিত করেছেন, তার চিকিৎসা দ্রুত দরকার। বিএনপির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও এখন (শুক্রবার) অব্দি নিশ্চিত কোনও সাড়া মেলেনি।
তবে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতার দাবি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতে পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে আবেদন করার আলোচনা হচ্ছে। আগামীকাল শনিবার (২৬ জুন) অনুষ্ঠেয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন প্রভাবশালী এ নেতা।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বেগম জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি তো যুক্তিতর্কের বিষয় না। এটা তার জীবন-মরণের প্রশ্ন।’
বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরামের আরেক সদস্য বলেন, পজিটিভ সাইন পরিষ্কারভাবে এখনও আমরা পাইনি। প্রধানমন্ত্রী না চাইলে এটা সম্ভব না।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। এরপর প্রথমে পুরান ঢাকার বিশেষ কারাগার ও পরে কারাবন্দি অবস্থায় বিএসএমইউ’র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।