ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার মোজাম্মেল হোসেন সিয়ামের পরকিয়ার বলি সদ্য ভূমিষ্ট কন্যা শিশু। পরকিয়া করেই ক্ষ্যান্ত নন মোজাম্মেল। শিক্ষিকা স্ত্রীর কাছ থেকে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য কাজী অফিসের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তালাক নামা পাঠিয়েও হয়রানি করছে।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, লক্ষীপুরের এক স্কুল শিক্ষিকার সাথে ৩ বছর আগে ফেসবুকে সাংবাদিক পরিচয়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে সম্পর্ক গড়ে তুলে ধোবাউড়ার দুধনই গ্রামের মৃত আবদুল হামিদ মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল। ধূর্ত মোজাম্মেল ব্ল্যাকমেলের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রেমের শুরু করে । মোজাম্মেল জানতো যে, এই নারীর সাথে প্রতারণা করলে কোনদিন বিচারের জন্য কোথাও দৌড়ঝাপ করতে পারবেনা । কারণ এই নারীর মা বেঁচে নেই, নেই কোন ভাই, আছে শুধু ৭০ উর্ধ্বো বাবা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিমাসে নিজের টানাপোড়নের কথা জানিয়ে শিক্ষিকার কাছ থেকে গত তিন বছরে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা। এদিকে এই নারী বিয়ের তাগিদ দিলে বিয়ে করবে বলে বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়। এক পর্যায়ে ২০১৯ইং সনের ১০ জানুয়ারী মোজাম্মেল বিয়ে করতে লক্ষীপুরের রামগঞ্জে ছুটে যান। স্থানীয় একটি কাজী অফিসে ইসলামি শরিয়ামতে ১লক্ষ টাকা দেনমোহরে মোজাম্মেলের সাথে ওই শিক্ষিকার বিয়ে হয়। বিয়ের পর শ্বশুড় বাড়ি আসতে চাইলে ওই শিক্ষিকার সাথে তালবাহানা শুরু করেন মোজাম্মেল। বেশ কয়েকমাস পর স্কুল শিক্ষিকা মোজাম্মেলের মা ও বোনদের বিয়ের খবরটি জানালে এক পর্যায়ে মোজাম্মেল ওই শিক্ষিকাকে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়েও আসে। কিছুদিন পর শিক্ষিকা গর্ভধারণ করলে মাথা গরম হয়ে যায় মোজাম্মেলের। মোজাম্মেল এই নারীর গর্ভপাত করানোর জন্য উঠে পড়ে লাগে ও হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। একসময় মোজাম্মেল জানায়, তার সাথে শুধু সংসার করতে পারবে- কিন্তু গর্ভে কোন বাচ্চা নিতে পারবেনা এবং প্রতিমাসে তার খরচ বাবদ টাকা দিতে হবে। এমন শর্তে থাকতে পারলে স্ত্রী হিসেবে থাকতে পারবে অন্যতায় চলে যেতে হবে না হয় তালাক দেয়ার হুমকি দেয়। কিন্তু ওই শিক্ষিকা সিয়ামের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না পেরে এবং গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতে চলে যান রামগঞ্জের বাবার বাড়ি। বাবার বাড়ি গিয়েও শান্তি পাননি তিনি। সেখানেও মোজাম্মেলের মানসিক নির্যাতন ও হুমকির শিকার হন।
অভিযোগে আরও জানা যায়, একসময় ওই স্কুল শিক্ষিকা জানতে পারেন অন্য এক মেয়ের সাথে তার প্রেমের সর্ম্পক চলছে। এদিকে সন্তান জন্মদানের তারিখ ঘনিয়ে আসলে মোজাম্মেলকে শ্বশুড় বাড়ী যেতে অনুরোধ করা হলেও মোজাম্মেল কর্ণপাত করেনি। এক পর্যায়ে মোবাইলও বন্ধ করে দেয়।
এদিকে গত ১ মে ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ওই নারী। সন্তান ভূমিষ্টের পর ওই নারী ও শিশুটির শারিরীক অবস্থার অবনতি দেখা দিলে ওই শিক্ষিকার বড় বোন মোবাইলে মোজাম্মেলকে স্ত্রী সন্তানকে দেখার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মোবাইল সংযোগ কেটে দেন। তখন বাধ্য হয়ে নিকটাত্মীয়রা ওই নারী ও সদ্যজাত শিশু সন্তানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লার শাকতলা মর্ডাণ হসপিটালে ভর্তি করান। ৫দিন এনআইসিওতে থাকার পর ৫ মে নিষ্পাপ শিশুটি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। সদ্যজাত শিশুটির মৃত্যুর কথা বারবার জানানোর পরও স্ত্রী ও মৃত সন্তানকে দেখতে যায়নি মোজাম্মেল। শিশু সন্তান মারা যাওয়ার খবরটি মোজাম্মেলের মা ও বোনের স্বামীকে জানালে তারাও হুমকি ধামকি দেয়। তারপরই মোজাম্মেলের বেশামাল চরিত্র বুঝতে আর বাকি থকলো না ভূক্তভোগী পরিবারের। পরকীয়ার বলীতে সদ্যজাত শিশু সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় ওই নারীর এলাকায় একজন শিক্ষিকা হিসেবে সুনাম নষ্টের আর বাকি রইলো না।।
এব্যাপারে মোজাম্মেল হোসেন সিয়াম বলেন, আমার সন্তান হয়েছিল ও মারা গেছে সেটা সত্য কথা। আমি সন্তান মারা যাওয়ার পর তাকে (ওই শিক্ষিকাকে) তালাক দিয়েছি। আমি তাকে ভরণপোষণের খরচ দেইনি এটা সত্য, আর ভরণপোষণের খরচ দিতে পারবনা এটা আমাদের দুজনের মধ্যে শর্ত ছিল। তবে সে আমার কথা শুনতো না। আর তাকে যে তালাক নামা পাঠানো হয়েছে সেটিতে বিয়ের তারিখ ভুল দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ওই স্কুল শিক্ষিকার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মোজাম্মেল অনেক নারীর সাথে পরকীয় করতো। আমার গর্ভে সন্তান আসার পর থেকেই সে নানাভাবে নির্যাতন করতো যা বলার মতো না। মোজাম্মেলের নির্যাতনের কারণে আমার গর্ভজাত শিশু সন্তানটি মারা গেছে। কারণ, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সময় আমার পাশে আপন কেউ ছিলনা। আমার আত্বীয় স্বজন কেউই এই বিয়ে মেনে নেয়নি। পরে যখন আত্বীয়রা শুনতে পায় আমি হাসপাতালে ও আমার পাশে স্বামী নাই তখন সবাই পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমার সরলতার সুযোগ পেয়ে বিভিন্ন সময় আমার কাছ থেকে বেতনের হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এখনও সে ব্ল্যাকমেল করার জন্য বানোয়াট তথ্য দিয়ে তালাকা নামা পাঠাচ্ছে। আমি সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে এই প্রতারক মোজাম্মেলের বিচার চাই।