তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের দোভাষী হিসেবে কাজ করে তুমুল সাড়া জাগিয়েছেন একজন তরুণী।
সম্প্রতি ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে ব্রাসেলসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে এরদোয়ানের বৈঠকেও দোভাষীর ভূমিকা পালন করে এই ফিলিস্তিনি তরুণী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই হিজাবি তরুণীর পরিচয় নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন চলছে সবার মনে। তুরস্কভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্যমতে দোভাষীর দায়িত্ব পালন করা হিজাবি তরুণী ছিলেন ফাতেমা কাওকজি। তিনি তুরস্কের প্রথম হিজাবি সংসদ সদস্য মারওয়া কাওকজির মেয়ে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে ফাতেমা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এরদোয়ান বৈঠকে দোভাষীর ভূমিকা পালন করেন।
তুরস্কের টোয়েন্টিফোর টিভির উপস্থাপক এরিন সেন্টুক এক টুইট বার্তায় লেখেন, ‘ফাতেমা, যিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্টের দোভাষী হয়ে তার পাশে বসে আছেন। এই বৈঠক নতুন নয়। বরং তিনি এই পদে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করছেন। যারা তার সম্পর্কে জানে না তাদের বলব, এই তরুণী বিদেশি ভাষায় পারদর্শী। কূটনৈতিক বিষয়ে অগাধ জ্ঞান রাখেন। এসব বিষয়ে তার যথেষ্ট জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আছে।’
ফাতেমা কাওকজি ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত একজন মুসলিম তরুণী। ১৯৯৯ সালে তার মা মারওয়া প্রথম হিজাবি নারী এমপি হিসেবে সংসদে প্রবেশ করেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নাজমুদ্দিন এরবাকানের নেতৃত্বে দ্য ভার্চু পার্টি থেকে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
কিন্তু তুরস্কের রাষ্ট্রপতি সলেমান ডেমিরেল ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত এই নারীর সংসদ পদ ও তুরস্কের নাগরিকত্ব কেড়ে নেন। শুধু তাই নয়, ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি লঙ্ঘন করে হিজাব পরে সংসদে প্রবেশ করার অভিযোগে তার তুরস্ক ত্যাগে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে মারওয়াসহ দলটির পাঁচ সদস্যকে পাঁচ বছরের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করে আইন করা হয়।
এরপর থেকে মারওয়া যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনের জীবন শুরু করেন। অতঃপর ২০১৭ সালে আইন পরিবর্তন হলে মারওয়া পুনরায় তুর্কি নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে পুনরায় তুরস্কের সরকারি দায়িত্ব পালন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায় তুরস্কের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বোন রাওজা কাওকজি বর্তমানে একে পার্টির সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মারওয়ার বড় মেয়ে মারয়াম কাওকজি তুরস্কের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর অপর মেয়ে ফাতেমা কাওকজি তুর্কি প্রেসিডেন্সিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি এরদোয়ানের বিভিন্ন বৈঠকে দোভাষীর ভূমিকা পালন করছেন।
এর আগে ফাতেমা কাওকজি যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনাকালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বেকি রিফুউটেশন অর্গানাইজেশন ফর রিলিজিয়াস ফ্রিডম, দ্য উডরো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলার্স ও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সূত্র: আল-জাজিরা