সিলেটের নতুন কারাগারে স্ত্রী হত্যার দায়ে দণ্ডিত স্বামী সিরাজুল ইসলাম সিরাজ (৫৫) নামের এক ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তার ফাঁকি কার্যকর করা হয় বলে কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
ফাঁসি কার্যকর হওয়া সিরাজ হবিগঞ্জ জেলার রাজনগর কবরস্থান এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে।
শহরতলীর বাদাঘাটে নবনির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে এটাই প্রথম ফাঁসি কার্যকরের ঘটনা। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন রাত পৌনে ১টার দিকে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দণ্ড কার্যকর হওয়ার পর তার লাশ স্বজনরা রাতেই দাফনের জন্য হবিগঞ্জে নিয়ে গেছেন। সিরাজের তিন মেয়ে রয়েছে। তারা তাদের মামার বাড়িতেই লালিত-পালিত হচ্ছেন।
কারা সূত্রে জানা গেছে, ফাঁসি কার্যকর করার আগে সিরাজের ইচ্ছে অনুযায়ী তার পরিবারের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। ফাঁসির মঞ্চে ওঠার আগে সিরাজ খুব শান্ত ছিলেন। কারা রীতি অনুযায়ী ফাঁসির মঞ্চে তোলার আগে সিরাজকে গোসল করানো হয় ও তওবা পড়ানো হয়।
জানা যায়, ২০০৪ সালে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে সিরাজুল ইসলাম সিরাজ স্ত্রী সাহিদা আক্তারকে শাবল ও ছুরি দিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় হবিগঞ্জ থানায় ২০০৪ সালের ৭ মার্চ হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই। দীর্ঘ শুনানির পর ২০০৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের (জেলা ও দায়রা জজ) বিচারক সিরাজের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। একইসাথে রায়ে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে সিরাজ হাইকোর্টে জেল আপিল করেন। পরে ডেথ রেফারেন্সের আলোকে ২০১২ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট সিরাজের আপিল নিষ্পত্তি করে সিলেটের আদালতের রায়ই বহাল রাখেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সিরাজ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে পিটিশন দাখিল করেন। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর রায়ে সিরাজের আপিল বাতিল করে ডেথ রেফারেন্সের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন। এরপর সিরাজ প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করলে চলতি বছরের ২৫ মে রাষ্ট্রপতি তা নামঞ্জুর করেন।
নতুন কারাগারে ফাঁসি
সিলেটের ধোপাদিঘীর পাড়ে ১৭৮৯ সালে নির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীদের স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় নতুন কারাগারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে সিলেট শহরতলির বাদাঘাটে নতুন কারাগার নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর নতুন কারাগারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারাগার সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-১ হিসেবে পরিচিতি পায়। পুরনো কারাগারের পরিচয় হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ হিসেবে। উদ্বোধনের আড়াই বছর পর বৃহস্পতিবারই এ কারাগারে প্রথম ফাঁসি কার্যকর হলো কোনো দণ্ডিত বন্দীর।