নারীদের সাক্ষরতার হারে দেশের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ আর সবচেয়ে এগিয়ে আছে খুলনা বিভাগ। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের ওপর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে দেখা গেছে, খুলনা বিভাগে ৯৪.৭ শতাংশ নারীই সাক্ষর। এরপরই রয়েছে বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ; এসব এলাকায় নারী সাক্ষরতার হার যথাক্রমে ৯১.৬, ৯০.৩ ও ৯০ শতাংশ।
ওই চার বিভাগের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে ঢাকা বিভাগ; এখানে সাক্ষরতার হার ৮৮.১ শতাংশ। ঢাকার পর চট্টগ্রাম বিভাগের অবস্থান, ৮৭.২ শতাংশ। সিলেট বিভাগের এই হার ৮৪.৯ শতাংশ। নারী শিক্ষায় সবচেয়ে পিছিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ; যার হার ৮৩.৭ শতাংশ।
বিবিএস ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘মাল্টি ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে-২০১৯’ জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে; যা গত মে মাসে প্রকাশিত হয়েছে। জরিপটি ৬৪ জেলা, শহর ও গ্রামাঞ্চলের ৬৪ হাজার ৪০০টি বসতবাড়ির ৩২ হাজার ২২০টি নমুনার ওপর পরিচালিত হয়।
জেলাওয়ারি হিসাবে দেখা গেছে, নারী সাক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি কুষ্টিয়া জেলায়, ৯৬.৬ শতাংশ। এর পরই ঝিনাইদহ (৯৫.৬ শতাংশ), খুলনা (৯৫ শতাংশ), বরিশাল (৯৪.৯ শতাংশ), ঝালকাঠি (৯৪.৭ শতাংশ) ও মাগুরার (৯৪.৭ শতাংশ) অবস্থান। জরিপ অনুযায়ী সব থেকে কম নারী সাক্ষরতার হার বান্দরবান জেলায়, ৬৭ শতাংশ। এর পরই কক্সবাজার (৭৫.২ শতাংশ), খাগড়াছড়ি (৭৭ শতাংশ), রাঙামাটি (৭৭.৩ শতাংশ) ও শেরপুরের (৭৮.৬ শতাংশ) অবস্থান।
জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে আইন আছে, কিন্তু আইনের প্রয়োগ সেভাবে নেই। বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে একটি বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন করা হয়েছে, কিন্তু তার ব্যবহার নেই। এই জায়গায় আমাদের আইনের ব্যবহার বাড়াতে হবে। পাশাপাশি গ্রামের দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের নগদ অর্থ দিতে হবে।’
পার্বত্যাঞ্চলে সাক্ষরতার হার কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো স্কুলের দূরত্ব; পাহাড়ের অনেক শিক্ষার্থীকে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয়, সে ক্ষেত্রে তাদের স্কুলের দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। এ ছাড়া আমাদের সমাজকে শিক্ষা সচেতন হতে হবে।’
ইন্টারনেট সংযোগ বেশি চট্টগ্রাম বিভাগে
করোনা মহামারির মধ্যে বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। বিবিএসের জরিপে দেখা গেছে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগে সবচেয়ে এগিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগ। বিভাগটিতে ৪৯.২ শতাংশ বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে রংপুর বিভাগ; এই হার মাত্র ১৮.৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে দেশের মোট ৩৭.৬ শতাংশ বাসাবাড়িতে রয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ।
জরিপ বলছে, ঢাকা বিভাগের অর্ধেকের বেশি বাসাবাড়িতেই ইন্টারনেট সংযোগ নেই; রাজধানীকেন্দ্রিক এই বিভাগে ৪৭ শতাংশ বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ আছে। তবে জেলার হিসাবে কিছুটা এগিয়ে আছে ঢাকা; ৬০.৫ শতাংশ। সিলেট বিভাগে এই হার ৪০.৮ শতাংশ; খুলনায় ৩৮.৭ শতাংশ, বরিশাল ৩২.২ শতাংশ, রাজশাহীতে ২৮.৩ শতাংশ ও ময়মনসিংহে ২৬.২ শতাংশ বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ আছে।
জেলাওয়ারী হিসাবে দেখা গেছে, কুমিল্লা ও ফেনী জেলার বাসাবাড়িতে সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে, দুই জেলায়ই এই হার ৬১.৮ শতাংশ। সব থেকে কম বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে কুড়িগ্রাম জেলায়; মাত্র ৫ শতাংশ।
ব্যক্তিগত ফোন বেশি নারায়ণগঞ্জের নারীদের
বিবিএস বলছে, ২০১৯ সালে দেশের ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে ৭১.৪ শতাংশ নারীই ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিগত ফোন ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জের নারীরা; ৯৩.১ শতাংশ। এর পরই রয়েছে ঢাকা জেলার নারীরা; ৮৬.৯ শতাংশ। সবচেয়ে কম ফোন ব্যবহার করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নারীরা, ৪৯.৫ শতাংশ।
প্রযুক্তি ব্যবহারে বৈষম্যের সুবিধা-অসুবিধা এবং এর প্রভাব বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি আলমাস কবীর বলেন, ‘আসলে আপনি যে বৈষম্যের কথা জরিপ অনুযায়ী বলছেন, তা হলো ডিজিটাল ইনইয়েকুয়েটি, যার প্রভাব অনেক। যারা বেশি বেশি ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে, তারা এগিয়ে যাচ্ছে বিশেষ করে ই-কমার্স ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের দিকে। অন্যদিকে তারা সরকারি ই-গভর্নেন্সের সব সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু অন্যরা পাচ্ছে না, এটা তো ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারকে ইন্টারনেট সহজলভ্যতার জন্য প্রথমেই যেটা করতে হবে, তা হলো ট্রান্সমিশন খরচ কমাতে হবে, তাহলেই ঘরে ঘরে ইন্টারনেট পৌঁছানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন লোকাল কনটেন্টের প্ল্যাটফর্ম যেমন বায়োস্কোপের মতো কিছু প্ল্যাটফর্ম চালু করতে হবে, যাতে করে এদিকে মানুষ আগ্রহী হয়।’