বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সাকিব আল হাসানের শুক্রবারের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে স্তম্ভিত। লিগের আয়োজক সিসিডিএমের চেয়ারম্যান কাজী ইনামের কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন সাকিব এরকম আচরণ করেছে? একই সঙ্গে এভাবে লিগ চালানোর কি দরকার তা নিয়েও প্রশ্ন করছেন।
এছাড়া দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে মুঠোফোনে নাজমুল হাসান জানান, দেশের বাইরে থেকে সাকিবের ঘটনায় প্রচুর ফোন পাচ্ছেন। ভয়ে সেসব এড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি।
নাজমুল হাসান বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে এ ঘটনা এতো দেশে ছড়িয়ে গেছে…আমাকে এতো দেশ থেকে ফোন করছে যে, আমি ভয়ে ফোন ধরছি না। বেইজ্জতি চরমে পৌঁছে গেছে। এগুলোর সবাধান না হলে ঘরোয়া লিগ খেলার কারণ দেখি না। লজ্জার চরম জায়গায় নিয়ে গেছে। সব শেষ করে দিয়েছে। আগেও হয়েছে কিন্তু এবার একদম চরম, বেইজ্জতি। বাংলাদেশের বাইরের কেউ তো এসব সমর্থন করছে না। যা সমর্থন সব আমাদের দেশেই।’
আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিজেদের পক্ষে না আসায় মোহামেডানের অধিনায়ক সাকিব প্রথমে স্টাম্পে লাথি দিয়ে আম্পায়ারের দিকে তেড়ে যান। পরবর্তীতে আম্পায়ার বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধ করতে চাইলে স্ট্যাম্প তুলে আছাড় দেন। দু’বারই মাঠের আম্পায়ারদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন সাকিব।
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা মুনি নানা মত দিচ্ছেন। কেউ বলছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের পক্ষপাততুষ্ট আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদ করতেই সাকিব এরকম করেছেন। সাকিবের স্ত্রীও একই দাবি তুলেছেন। এসব কানে গেছে নাজমুল হাসানেরও। এজন্য সাকিবের ঘটনার গভীর তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন তিনি। ১৫ জুন বোর্ড সভার আগে এ প্রতিবেদন চান তিনি।
পাশাপাশি নিজের ক্ষোভও ঝাড়েন বোর্ড প্রধান, ‘আমার প্রথম কথা হলো যদি কারো ভাবনায় এরকম চিন্তা থাকে যে ঘরোয়া ক্রিকেটে এরকম হয় তাহলে খেলার দরকার কি? যতক্ষণ পর্যন্ত মীমংসা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত খেলার তো দরকার নেই। মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যা বলছে, এসব খেলায় আগে সব সেটিং থাকে, এই করা হচ্ছে…ওই করা হবে…তাহলে তো এই খেলার কোনো মানে হয় না। আগে সমস্যার সমাধান করো, তারপর মাঠে নামো। কেন আমরা খেলাবো? তাও আবার কোভিডের মধ্যে? যেখানে ১ কোটি টাকারও বেশি বাড়তি খরচ করছে বোর্ড শুধুমাত্র কোভিডের কারণে। এতো কিছু করে এতো কথা শোনার তো দরকার নেই।’
তিনি দাবি করেন, এখন পর্যন্ত যতগুলি ম্যাচ হয়েছে সেসব নিয়ে কোনো ক্লাব অভিযোগ করেনি। গতকাল মোহামেডান নিজেদের রিপোর্টে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। তাহলে কেন মাঠে এমন ঘটনা ঘটলো?
নাজমুল হাসান বলেন, ‘অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা ম্যাচের রিপোর্টে থাকে। সেখানে কিছু নেই। ওরা (সিসিডিএম) বলছে, কোনো ক্লাবের কোনো সমস্যা নেই। আম্পায়ারিং নিয়ে এর আগে অভিযোগ ছিল। ক্যামেরা লাগানোর পর তো এসব অভিযোগ বন্ধ হয়েছে। এরপর একবারও শুনিনি। কেন তাহলে এরকম এবার বলা হচ্ছে একটা ঘটনার পরই? আবার যেহেতু আম্পায়ারিং নিয়ে কথা উঠেছে আমি জানতে চাই ক্লাবগুলো থেকেই তাদের কোনো অভিযোগ আছে কি না।’
মাঠের বিতর্কিত আচরণের জন্য ক্রিকেটের নিয়মে সাকিব শাস্তি পেয়েছেন। বিসিবি কোনো শাস্তি দেবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসুক তারপর দেখা যাবে।’
কিছুদিন আগে লিগের বায়ো বাবল ভেঙে সাকিব অনুশীলন করায় তদন্তের মুখে পড়েছিল তার ক্লাব মোহামেডান। এজন্য মোহামেডানকে সতর্ক করে ‘ছাড়’ দিয়েছে বিসিবি ও সিসিডিএম। সাকিবও এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। সেই রেশ না কাটতেই এবার আরও বড় কাণ্ড ঘটালেন সাকিব।