কানাডার লন্ডন শহরে গত রোববার রাতে বর্ণবাদী এক চালক গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করা পাকিস্তান বংশোদ্ভূত মুসলিম পরিবারের চার সদস্যকে জানাজার পর অন্টারিওর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
কানাডার জাতীয় পতাকায় মোড়ানো তাদের কফিন দেখে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। জানাজায় মুসলিম কমিউনিটির কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।
দক্ষিণ-পশ্চিম অন্টারিওর ইসলামিক সেন্টারের মাঠে গাড়ি হামলায় নিহত সৈয়দ আফজাল (৪৬), তার ৭৪ বছর বয়সি বৃদ্ধ মা, সৈয়দ আফজালের স্ত্রী মাদিহা সালমা (৪৪) এবং তাদের মেয়ে ইয়ুমনাহ আফজালের (১৫) জানাজা শনিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কানাডায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার রাজা বশির তারার। তিনি বলেন, আজ কানাডার সব শান্তিপ্রিয় মানুষ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বর্ণবাদী ও জাতিবিদ্বেষকে সবাই ঘৃণা করে।
এর আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্বব্যাপী পরিকল্পিতভাবে একটি মহল ইসলামভীতি ছড়াচ্ছে। বর্তমানে তা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
তবে এই ধর্মবিদ্বেষের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোয় কানাডার সরকার, দেশটির সুশীল সমাজ, সাধারণ জনগণ ও গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পাকিস্তান বংশোদ্ভূত একটি মুসলিম পরিবারের চার সদস্যকে কানাডায় গাড়িচাপা দিয়ে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তান একে ইসলামবিদ্বেষী ও সন্ত্রাসী হামলা বলে আখ্যায়িত করেছে।
পাকিস্তান সরকার মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এক টুইটবার্তায় নিরপরাধ ওই মুসলিম পরিবারটির ওপর গাড়ি তুলে দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে এটিকে সন্ত্রাসী হামলা বলেছেন।
কানাডার লন্ডন শহরে গাড়িচাপা দিয়ে একই পরিবারের চারজনকে হত্যার ঘটনাকে ‘জাতিবিদ্বেষ’ বলে আখ্যা দিয়েছে স্থানীয় পুলিশও।
এ ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, এই জঘন্য ও নারকীয় ঘটনায় আমরা হতভম্ব, শোকস্তব্ধ। এ ধরনের জাতিবিদ্বেষ ও হিংসা এ দেশে কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।
উল্লেখ্য, কানাডার স্থানীয় সময় রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে লন্ডনের রাস্তায় মুসলিম পরিবারটির ওপর ট্রাক উঠিয়ে দেয় ন্যাথানিয়েল ভেল্টম্যান নামে ২০ বছর বয়সি এক ইসলামবিদ্বেষী চালক।
হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থল থেকে সাত কিলোমিটার দূরে তাকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলে প্রেরণ করা হয়।
গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে চালক স্বীকার করেন, মুসলিম বলেই তাদের তিনি ইচ্ছে করে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করেছেন।
সোমবার এ নৃশংস ঘটনায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিহতদের প্রতি গভীর শোক এবং ধর্মবিদ্বেষের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, আমি খবরটি শুনে আতঙ্কিত, কানাডায় ইসলামবিদ্বেষ বা যে কোনো ধর্মবিদ্বেষীদের স্থান হবে না।
ওই নৃশংস হামলায় মুসলিম পরিবারটির ফায়েজ আফজাল নামে ৯ বছরের আরেক শিশুও গুরুতর আহত হয়েছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গাড়ি হামলার শিকার মুসলিম ওই পরিবারটি ১৪ বছর আগে পাকিস্তান থেকে এসে কানাডার লন্ডন শহরে বসবাস শুরু করে।
গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে চালক স্বীকার করেছে, মুসলিম বলেই তাদের গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
লন্ডনের মেয়র অ্যাড হোল্ডার এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। লন্ডনের গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর পল ওয়েট বলেন, আমাদের কাছে প্রমাণ আছে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
মুসলিম পরিবারটি পাঁচ সদস্য রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাদের গাড়িচাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ওই চালক।