কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনেই তার দল অংশ নেবে না। পাশাপাশি তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও কোনো নির্বাচনে যাবে না।
আজ শনিবার দুপুরে মতিঝিলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচিত গণফোরামের যে দুইজন সংসদ সদস্য শপথ নেবেন বলে কথা উঠেছে, তারা আশা করি শপথ নেবেন না। কারণ জনগণ এ নির্বাচন গ্রহণ করেনি।
সংবাদ সম্মেলনে দলীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম সম্পাদক প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী, কাদের সিদ্দিকীর মেয়ে কুড়ি সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক প্রমুখ।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে দলীয় পর্যবেক্ষণ ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে বিস্তারিত তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
আজ দুপুর একটায় এ সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় তা দুপুর ২টায় হবে। বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়, আজ সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে (৮০ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা) এক বর্ধিত সভার আযোজন করা হয়েছে। তবে এটি একটু দেরিতে হওয়াতে বেলা দু’টায় সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে। আর সভাশেষে বেলা একটায় প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হলে গত ৫ নভেম্বর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। সেদিন মতিঝিলে কাদের সিদ্দিকীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেন।
যোগ দেয়ার পরপরই বঙ্গবীর ছুটে যান জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের মতিঝিলের চেম্বারে।
এ সময় বঙ্গবীরকে বুকে জড়িয়ে ধরে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার এটি। আপনি আমাদের মধ্যে এসেছেন এটি অনেক অনুপ্রেরণা জোগাবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবীর বারবার ঝুঁকি নিয়েছেন দেশ মাতৃকার ডাকে। ইতিহাস সৃষ্টি করা মানুষ তিনি। কাদের সিদ্দিকীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনাকে সাথে পেয়ে আমার আর কোনো চিন্তা নেই। আমি এখন অবসরে গেলেও চিন্তা নেই। ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, কাদের সিদ্দিকী শুধু মুক্তিযুদ্ধ করেননি। ঝুঁকি নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। আবার বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি আরো বড় ঝুঁকি নেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবীর বারবার জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। এ ধরনের ঝুঁকি নেয়ার পরও তিনি এখনো আমাদের মধ্যে আছেন- এটি বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সবাই ভেবেছিল আমরা দমে গেছি। আর সামনের দিকে যেতে পারব না। কিন্তু কাদের সিদ্দিকী প্রতিরোধ করে দেখিয়ে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদেও বাংলাদেশ গর্জে উঠতে পারে। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্টে বঙ্গবীরের যোগদানে আমরা সবাই অনুপ্রাণিত হয়েছি। তিনি আবারো প্রমাণ করলেন সব সময় দেশের বিপদে তিনি এগিয়ে আসেন।
যোগদান অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও মোহাম্মদ শাহজাহান এবং গণফোরাম নেতাদের মধ্যে মফিজুল ইসলাম খান কামাল, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, আ ও ম শফিক উল্লাহ, মুকাব্বির খান, মোশতাক আহমেদ, এম শফিউর রহমান খান বাচ্চু, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষ থেকে নাসরিন সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক, প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী, শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, আমিনুল ইসলাম তারেক এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, ছাত্রনেতা রুপু ও মোহাম্মদ উল্লাহ মধু উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে কাদের সিদ্দিকী বলেন, যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে লড়াই, সংগ্রামের মাত্রা বেড়ে গেল। সমস্ত মেধাশক্তি দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ও মুক্তির জন্য কাজ করব। বর্তমানে স্বৈরাচারের ভূমিকায় যারা আছেন, তাদেরকে হটাতে পারব।
কাদের সিদ্দিকী আরো বলেন, অনেক দিন পরে হলেও বিরোধী দলগুলোকে তিনি ডেকে প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করছেন। সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। আলোচনায় যখন বসা শুরু হয়েছে, তখন থেকেই দেশের পরিস্থিতি ভালো হয়েছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠানে বি. চৌধুরী যোগ দেয়ার কথা থাকলেও যোগ দেননি। কারণ তিনি ড. কামালকে সহ্য করতে পারেন না। তিনি ও তার দল দাম্ভিকতার সাথে এগোচ্ছে। মাহী বি. চৌধুরী সংসদে আসার দরকার নেই। কারণ দেশবাসী তাকে চায় না।
অনুষ্ঠানে আ স ম আবদুর রব বলেন, চলমান লড়াই গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের দাবি আমলে নিতে হবে। তার পায়ের নিচে মাটি নেই। এ জন্য ভোট চুরি বা জালিয়াতির জন্য ইভিএম পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের দাবি মেনে নেন। দেশকে সঙ্ঘাতের দিকে ঠেলে দেবেন না।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আমরা আশা করি।