বিএনপির কোনো সমস্যা নেই উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিএনপির কোনো সমস্যা নেই, বিএনপি ইউনাইটেড, বিএনপি শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।’ তিনি বলেন, ‘অধিকার চলে যাচ্ছে, গণতন্ত্র চলে যাচ্ছে। দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। জাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি নেত্রীদের নিয়ে গঠিত নারী অধিকারভিত্তিক সংগঠন ‘আওয়াজ’র আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে ‘সহিংসতা ও নারী : বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকাল একটা জিনিস দেখবেন টেলিভিশনে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা দেখাতে থাকেন- কোথায় বিএনপির ভুল, কোথায় ঐক্যফ্রন্টের ভুল। আর আওয়ামী লীগ যে ভুল নয়, ইচ্ছাকৃতভাবে রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিল সে বিষয়ে কথা বলার সাহস তাদের নেই। তারা ভয়ভীতি ছড়িয়ে দিয়েছে। এখন সেই ভয়ে কেউ কথাই বলতে চায় না। গোটা পৃথিবীর মিডিয়া জানে বাংলাদেশর গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মরার আগে মরে যাওয়া ঠিক নয়, এটা কেন? আমরা মরে যাওয়ার আগে মরে যাচ্ছি। আমরা ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ঘরে ঢুকে থাকার চেষ্টা করছি। ঘরে ঢুকে থাকলে আমরা বাঁচবো না। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আপনারা ভয় পাবেন না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই নির্বাচনে বড় একটা কাজ হয়েছে, আওয়ামী লীগ জনগণের কাছ থেকে চিরদিনের জন্য চলে গেছে। তারা পরাজিত হয়েছে। এখন সাহস নিয়ে আমরা লড়াই করছি। লড়াই করবো, জয় ছাড়া পিছু হটবো না। আমরা ন্যায়ের পথে আছি, আমাদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী।’
খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে, রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে- দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনে যেন তিনি অংশগ্রহণ করতে না পারেন, রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য তাকে নির্জন কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তিনি জামিন পেয়েছেন তাকে জামিন দেয়া হবে না।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা সবাই জানি গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশে একটি দলের শাসন চলছে এবং তারা ছলেবলে-কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে রাষ্ট্রকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়ার উপক্রম করছে। অত্যন্ত সচেতনভাবে রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত নির্বাচনে একটি প্রতিষ্ঠানকেও বাদ দেয়া হয়নি। এর চেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সংসদ চলছে। এই সংসদ কার কথা বলবে? এই সংসদ মহিলাদের ওপর যে নির্যাতন হচ্ছে সে বিষয়ে কথা বলবে? বলবে না, কারণটা হচ্ছে তাদের লোকরাই এ সমস্ত কাজ করছে। এই সংসদের তো নৈতিক কোনো বৈধতা নেই। এই সংসদের বসার নৈতিক কোনো অধিকার নেই। কারণ তারা নির্বাচিত নয়। নির্বাচনের নামে সম্পূর্ণ একটি প্রহসন হয়েছে। এটা একটা নিষ্ঠুর প্রহসন হয়েছে গোটা জাতির প্রতি।’
বাংলাদেশ কঠিনভাবে নারীশাসিত- মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশ পুরুষশাসিত নয়, নারীশাসিত, কঠিনভাবে নারীশাসিত।’
সম্প্রতি দেশে গণধর্ষণের ঘটনায় নারী অধিকার সংগঠনগুলো সেভাবে সোচ্চার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলও সেভাবে এগিয়ে আসতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে অধ্যাপক ড. দিলার চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শাহিদা রফিক, অধ্যাপক ড. তাজমেরী ইসলাম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক আফরোজা আব্বাস, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ বক্তৃতা করেন।