ময়মনসিংহ সীমান্তবর্তী এলাকাতে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্প

earthquakeডাউকি ফল্ট লাইন বা ফাটল রেখার অবস্থান সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের উত্তরে সীমান্তজুড়ে যা ভারতের শিলং মালভূমি এর দক্ষিণ সীমানা ঝুড়েই আজ সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যে চার দফা ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। দফায় দফায় ভূমিকম্পে সাধারণ মানুষের মধ্যে একদিকে যেমন আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি বিশেষজ্ঞরাও বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা ব্যক্ত করে সতর্ক থাকতে বলছেন। সিলেটেও একই সময়ে ভূমিকম্প অনূভূত হয়েছে।

সিলেটে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, আজ সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে প্রথমবার, ১০টা ৫০ মিনিটে দ্বিতীয়বার, ১১টা ৩০ মিনিটে তৃতীয়বার এবং ১টা ৫৮ মিনিটে চতুর্থবার ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে ১০টা ৫০ মিনিটে সবচেয়ে জোরে কম্পন অনুভূত হয়, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১।

তিনি বলেন, ‘চারটি ভূমিকম্পই সিলেট অঞ্চলের মধ্যে হয়েছে এবং কেবলমাত্র সিলেট জেলা থেকেই অনুভূত হয়েছে তাই এর কেন্দ্র ও গভীরতা নিশ্চিত করা যায়নি। এসব তথ্য নিশ্চিত করতে অন্তত তিনটি কেন্দ্রে ভূকম্পন রেকর্ড হতে হয়, কিন্তু এগুলোর উৎপত্তির গভীরতা কম থাকায় কেবলমাত্র সিলেট কেন্দ্রে রেকর্ড হয়েছে।’

এই চার দফা ভূমিকম্প ছাড়াও এগুলোর আফটার শক হিসেবে আরও কয়েক বার সিলেটে কম্পন অনুভূত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্থ অবজারভেটরির পরিচালক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘ভূমিকম্পগুলোর উৎপত্তিস্থল জৈন্তাপুর উপজেলার সারি নদীর উজানে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে, যা ডাউকি ফল্ট লাইনের পূর্বপ্রান্ত।’

১৮৯৭ সালে ডাউকি ফল্ট লাইনে ৮ মাত্রারও বেশি মাত্রায় ভূমিকম্প হয়, যার তীব্রতা কলকাতা ছাড়িয়ে আরও পশ্চিমে এবং মিয়ানমার পর্যন্ত অনুভূত হয়।

ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘আমাদের গবেষণা বলছে ডাউকি ফল্ট লাইন এবং চট্টগ্রাম বিভাগের পূর্ব সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম-ত্রিপুরা ফোল্ড বেল্ট এ প্রচুর পরিমাণে স্ট্রেইন এনার্জি (ভূমিকম্পের শক্তি) কয়েকশ বছর ধরে জমা হয়ে আছে। এই শক্তি যখন ছেড়ে দিবে, তখন বড় ভূমিকম্প হবে।’

তিনি বলেন, ‘ডাউকি ফল্ট লাইনে যে শক্তি আছে, তাতে ৭.৫ থেকে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে এবং চট্টগ্রাম-ত্রিপুরা ফোল্ড বেল্টে ৮.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তি জমা আছে।’

ড. হুমায়ুন আখতার বলেন, বড় ভূমিকম্পের আগে এরকম ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়। সে থেকে ধারণা করা যায় আগামী এক-দুইদিন থেকে এক-দুই মাসের মধ্যে ডাউকি ফল্টে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে।’

ঢাবির ভূতত্ত্ব বিভাগের এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘বিজ্ঞান এখনো সে অবস্থায় যায়নি যাতে আমরা আগে থেকেই নিশ্চিতভাবে বলতে পারি ঠিক কোন সময়ে কত মাত্রার ভূমিকম্প হবে। তাছাড়া ফল্ট লাইনে জমা শক্তি যদি একসাথে বের হয় তাহলে সেটা ভয়াবহ বিপজ্জনক। কিন্তু যদি সেটা একটু একটু করে বের হয়, তখন ভয়ের কারণ কমে যায়।’

ভূমিকম্প থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই উল্লেখ করে ড. হুমায়ুন আখতার বলেন, আমাদের দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে চাইলেই ভূমিকম্পসহিষ্ণু পরিকল্পনা প্রণয়ন বা বাস্তবায়ন করা যাবে না, এবং তাতে প্রচুর সময়ও প্রয়োজন। এখন সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সচেতনতা।’

তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, কিভাবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই যে যেখানে আছে, সেখান থেকে তুলনামূলক নিরাপদ জায়গায় যেতে পারে। ব্যাপক ভূমিকম্পের মহড়া প্রয়োজন, তাতে মানুষের মধ্যে মানসিক প্রস্তুতি বাড়ে। ২০১৫ সালে আমাদের থেকে ৭২০ কিলোমিটার দূরে নেপালে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে দেশে পাঁচ জন মারা গেছেন। তাই ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না কোনভাবেই।’

এদিকে সিলেট নগরীতে চার দফা ভূমিকম্পে দ্রুত প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সঙ্গে আজ বিকেল ৪টায় জরুরি সভায় বসেছে সিলেট সিটি করপোরেশন।

Share this post

scroll to top