টাঙ্গাইলের মধুপুরে বাণিজ্যিক আবাদ শুরু হয়েছে পুষ্টিকর পার্পেল পটেটোর। মন মাতানো ফ্লেভারের কফি, সুমিষ্ট ড্রাগন, ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ মাল্টার পর এবার পুষ্টিকর পার্পেল পটেটো চাষে সফলতা দেখিয়েছেন অদম্য এক কৃষক। কৃষকের তার সানোয়ার হোসেন। বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মহিষমারা গ্রামে।
শিক্ষাজীবন শেষ করে সানোয়ার হোসেন শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু বছর না ঘুরতেই তা ছেড়ে বাপ-দাদার কৃষিকে জীবিকা হিসেবে বেছে নেন। পারিবারিকভাবে পাহাড়ি লাল মাটির ছয় একর জমিতে বরাবরই আনারস আবাদ হতো। সেটির পাশাপাশি নতুন করে চার একরে মাল্টা, এক একরে ড্রাগন, তিন একরে কফি, বাতাবিলেবু, আরবি খেজুর ও পেঁপের আবাদ যোগ করেন।
গতবার এক কৃষিবিদের মাধ্যমে আমেরিকান জাতের পার্পেল পটেটো বা বেগুনি আলুর জাত সংগ্রহ করেন তিনি। সেটি লাগান এক একর জমিতে। এই চাষে প্রতি শতাংশে ফলন পেয়েছেন দুই মণ। বিক্রি করেন ১০০ টাকা কেজি দরে। আকর্ষণীয় রঙ আর ব্যতিক্রমী স্বাদের দরুন বেচাবিক্রিতে কোনো সমস্যা হয়নি।
সানোয়ার জানান, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক নয়, নিরাপদ জৈব সার দিয়ে আনারসসহ বৈচিত্র্যময় ফল ও ফসল আবাদ করেন তিনি। বাড়িতে রয়েছে গরুর খামার। সেটির গোবরে তৈরি হয় কম্পোস্ট সার।
পার্পেল চাষ সম্পর্কে জানান, মধুপুরের পাহাড়ি এলাকায় শ্রাবণ-ভাদ্রে বাগান থেকে আনারস তোলার পর এমনিতেই চার মাস জমি পতিত থাকে। সেই জমিতে মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে সহজেই পার্পেল আবাদ সম্ভব। খরা প্রতিরোধক হওয়ায় সেচ এমনকি সারও লাগে না। পোকামাকড়ের উপদ্রব তো নেই বললেই চলে। আলু তোলার পর জমিতে লতানো গাছ গবাদিপশুর উত্তম খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়।
একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত পুষ্টিবিদ ড. আবু রায়হান জানান, বিশ্বে ৪০০ রকমের মিষ্টি আলুর মধ্যে জাপানি ও আমেরিকান জাতের বেগুনি আলু বা পার্পেল পটেটো সবচেয়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ। আঁশসমৃদ্ধ এ আলুতে প্রচুর শর্করা ছাড়াও পটাশিয়াম, ভিটামিন এ বি সি বিটা ক্যারোটিন ও প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি কোষের ক্ষয়রোধ ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। সনাতন রীতিতে খাওয়া ছাড়াও ভেজিটেবল, স্যুপ ও সালাদের সাথেও এটি খাওয়া চলে।
মধুপুর উপজেলার মহিষমারা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এরশাদ আলী জানান, দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি পার্পেলসহ যেকোনো মিষ্টি আলু চাষ করা যায়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর কন্দ বা চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। আগে নদীতীরের পলি মাটিতে এর আবাদ হতো। এখন সানোয়ার হোসেনের মতো খামারিরা মধুপুরের লাল মাটিতে লাভজনক ফসলের তালিকায় পার্পেলকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। খামারের একই জমিতে পর্যায়ক্রমিকভাবে বৈচিত্র্যময় ফল ও ফসল আবাদ করে তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। পুষ্টিকর পার্পেল এলাকায় সাড়া ফেলেছে।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, মধুপুর গড়ে প্রায় ৫০ একরে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়। তবে পার্পেল জাতের আবাদ এবারই প্রথম। মধ্যবর্তী বা একক ফসল হিসেবে পার্পেলের বাণিজ্যিক চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। শত ভাগ বিশুদ্ধ খাবার হিসেবে বিদেশে রফতানির সুযোগও রয়েছে। চাষিদের আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ জন্য ‘কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প’ হাতে নেয়া হয়েছে। হাতেকলমে শিক্ষার জন্য প্রদর্শনী প্লটও করা হয়েছে। পার্পেল ছাড়াও বারি উদ্ভাবিত দু’টি উফশি জাতকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।