পাকিস্তানের নতুন হাইকমিশনার হিসেবে পেশাদার কূটনীতিক সাকলাইন সাইয়াদাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বাংলাদেশ। তার পরিবর্তে এই পদে নতুন নাম চাওয়া হয়েছে। নতুন নিয়োগকে কেন্দ্র করে টানাপড়েনের কারণে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনারের পদটি প্রায় এক বছর ধরে খালি পড়ে রয়েছে। পাকিস্তানের সর্বশেষ হাইকমিশনার ছিলেন রফিকুজ্জামান সিদ্দিকী। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে তিনি ইসলামাবাদ চলে গেছেন।
পাকিস্তান ঢাকায় নতুন হাইকমিশনার হিসেবে সাকলাইন সাইয়াদার নাম প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান- কোনোটাই না করে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখেছিল। এ ব্যাপারে পাকিস্তান বারবার তাগাদা দিলেও বাংলাদেশ সাড়া দেয়নি। অবশেষে গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে সাকলাইন সাইয়াদাকে ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতির কথা জানিয়ে এই পদে নতুন নাম চেয়েছে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও দণ্ড কার্যকর করা শুরু করলে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। এ পর্যায়ে তা পরস্পরের হাইকমিশনের স্টাফদের বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কার, এমনকি অপহরণ-পাল্টা অপহরণ পর্যন্ত গড়ায়। এ সময় অসংখ্যবার পরস্পরের হাইকমিশনারদের তলব-পাল্টা তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।
মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ফের তলব
মংডু পুলিশ পোস্ট এলাকায় বাংলাদেশী নাগরিকেরা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে এমন খবরের প্রতিবাদ জানাতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কোনোভাবেই জড়িত নয়।
২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর নজিরবিহীন দমন-পীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ অভিমুখে শরণার্থীদের ঢল নামার পর বিভিন্ন কারণে দেশটির রাষ্ট্রদূতকে বারবার তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চলতি জানুয়ারি মাসেই ভিন্ন ভিন্ন কারণে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তিনবার তলব করা হয়েছে।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ লুইন গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন। তাকে তলব করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশীরা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে- মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বরাতে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের কড়া প্রতিবাদ জানাতেই রাষ্ট্রদূতকে তলব হয়। তবে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে রাষ্ট্রদূত দাবি করেন, তলব নয়, দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনার জন্যই তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসেছেন।
গত ২৪ জানুয়ারি মিয়ানমারের বেশ কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৪১ নম্বর পিলারের কাছে মংডু পুলিশ পোস্ট এলাকায় বাংলাদেশী নাগরিকেরা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এই সন্ত্রাসী হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে বলে খবরে জানানো হয়।
এর আগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের শূন্য রেখার ১৫০ গজের মধ্যে তুমব্রু খালে অবৈধভাবে পাকা স্থাপনা নির্মাণের প্রতিবাদে গত ১৫ জানুয়ারি মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ লুইনকে তলব করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া আরাকান আর্মি ও আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) নিয়ে বাংলাদেশকে জড়িয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্যের প্রতিবাদে গত ৮ জানুয়ারি, বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৪১ রাউন্ড গুলি ছোড়ার প্রতিবাদে ৭ নভেম্বর এবং দেশটির সরকারি একটি ওয়েবসাইটের মানচিত্রে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপকে মিয়ানমারের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করার ঘটনায় গত গত ৬ অক্টোবর রাষ্ট্রদূত উ লুইনকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।