নির্বাচনের আগে ভারতজুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা!

এ বছরের মে মাসে ভারতে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরুর আশঙ্কা রয়েছে। ভারতের শাসকদল হিন্দু জাতীয়তাবাদী ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করলে দাঙ্গার আশঙ্কা আরো বেড়ে যেতে পারে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা দ্য ওয়ার্ল্ডওয়াইড থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট শীর্ষক এক রিপোর্টে এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ড্যান কোটস গত মঙ্গলবার মার্কিন আইনসভার প্রভাবশালী সিনেট সিলেক্ট কমিটির কাছে এ রিপোর্ট হস্তান্তর করেন। ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে কোথায় বিপদ লুকিয়ে আছে, তা নিয়েই এ রিপোর্ট তৈরি করেছে বিভিন্ন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা। সেখানে ভারত প্রসঙ্গে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেন মার্কিন গোয়েন্দারা।

মার্কিন কংগ্রেসের সিনেট সিলেক্ট কমিটিকে ড্যান কোটস স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ভারতীয় জনতা পার্টি হিন্দু জাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করার চেষ্টা করলে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতে নিশ্চিতভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা বাড়বে।’ কংগ্রেসের সিনেট সিলেক্ট কমিটির সামনে এ রিপোর্ট পেশের সময় সেখানে এফবিআই, সিআইএ ও মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের গোয়েন্দা প্রধানও উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে সম্প্রতি ভারত সফর করে যাওয়া সিআইএ পরিচালক জিনা হ্যাসপেল, এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টোফার রায় ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক রবার্ট অ্যাশলে উল্লেখযোগ্য।

মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘হিন্দুত্ববাদী নীতি নেয়ার কারণে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে এরই মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর আগে অর্থাৎ ২০১৪ সালেও বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। আগামী নির্বাচনে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব আবারো হিন্দুত্ববাদী রাস্তায় হাঁটলে সাধারণ কর্মীরা সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটাতে উৎসাহ পাবে। সে ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই সহিংসতার ঘটনা বাড়বে।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাঁচ বছরের মেয়াদ মে মাসে শেষ হবে। সে ক্ষেত্রে লোকসভা নির্বাচন ও নতুন পার্লামেন্ট গঠনের পুরো প্রক্রিয়া মে মাসের মধ্যে শেষ হতে হবে।

গোয়েন্দারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা বৃদ্ধি পেলে দেশের মুসলিম সম্প্রদায় আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। আর সেই সুযোগ নিয়ে মুসলিম সমাজে প্রভাব বাড়াতে পারে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীও।’ ভারত ইস্যুতে নির্বাচনের পাশাপাশি পাকিস্তানের সাথে তাদের সম্পর্ক নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী মে মাস নাগাদ এ সম্পর্ক একদম তলানিতে পৌঁছবে বলেই আশঙ্কা মার্কিন গুপ্তচরদের। তাদের দাবি, ‘সীমান্তে সহিংসতা, নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি, ভারতের নির্বাচন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে পাকিস্তানের আশঙ্কার কারণে মে মাস পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা থাকবে।’ এ মুহূর্তে দুই দেশই খুবই অনড় অবস্থায় থাকায় মে মাস পর্যন্ত শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানান তারা।

রিপোর্টে ভারত ছাড়াও আফগানিস্তানে মধ্য জুলাইয়ে নির্বাচন ও তালেবানের ব্যাপক হামলা, পাকিস্তানের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সাথে আলোচনায় সরকারের অস্বীকৃতি কারণে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোতে সমস্যা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। রিপোর্টে পাকিস্তান সম্পর্কে বলা হয়, পাকিস্তানের অব্যাহত সমর্থনের কারণে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে, যারা আফগানিস্তান ও ভারতে হামলা চালাতে পারে। অন্য দিকে চীন-ভারত সম্পর্কে বলা হয়, ২০১৭ সালের দোকলামে সীমান্তসংক্রান্ত বিবাদের পর দুই দেশের মধ্যে সেই উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া ভারত ও পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের উন্নয়নের কারণে পরমাণু বিপদের মুখে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া।

সূত্র : ট্রিবিউন ইন্ডিয়া ও রয়টার্স

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top