দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ব্যয় প্রশ্নমুক্ত হতে পারছে না। বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্প নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) দু’টি প্রকল্পে গ্রাহকপ্রতি ব্যয় ১০ হাজার টাকা বেশি দেখানো হচ্ছে। ১৮ লাখ সংযোগে গ্রাহকপ্রতি ব্যয় যেখানে ৩৫ হাজার ৬৯৯.৯৪ টাকা, সেখানে ১৯.৫ লাখ সংযোগে গ্রাহকপ্রতি সেই ব্যয় হচ্ছে ৪৪ হাজার ৫৮৬.৬৭ টাকা। অন্য দিকে, প্রকল্পের মেয়াদ ও কাজের আকার বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ১১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে এই প্রকল্পের ব্যয় এখন এক হাজার ৭৭৫ কোটি ৪৮ লাখ ২২ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে একনেকে দেয়া সংশোধিত প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) আওতাধীন ৬১ জেলার ৭৭টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) ১৫ লাখ গ্রাহককে সংযোগ দেয়ার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ ছয় হাজার ৯১৫ কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প ২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। তবে চলমান ১৮ লাখ গ্রাহক সংযোগ প্রকল্পে অনুমোদিত ব্যয় হলো ছয় হাজার ৪২৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। চলমান প্রকল্পে গ্রাহকপ্রতি ব্যয় হবে ৩৫ হাজার ৬৯৯.৯৪ টাকা করে। প্রকল্পটি ২০১৮ সলের ডিসেম্বরে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু অক্টোবর পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র ৪০ শতাংশ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এখন নতুন করে সাড়ে পাঁচ লাখ গ্রাহক সংযোগ এবং ১৫ হাজার কিলোমিটার লাইন নতুন করে নির্মাণ করা হবে। ফলে ৪৪ হাজার কিলোমিটার লাইনের পরিবর্তে এখন ৫৯ হাজার কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করতে হবে। আর নতুন প্রকল্পে একই খাতে ব্যয় গ্রাহকপ্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৪৪ হাজার ৫৮৬.৬৭ টাকা করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা যায়, সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নেই এই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, সুলভমূল্যে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে গ্রামবাংলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন ও দারিদ্র্য বিমোচনে পবিসের নতুন গ্রাহকদের সংযোগ প্রদান। বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড দুই লাখ ৮৮ হাজার ৪৩৮ কিলোমিটার লাইনের মাধ্যমে এক কোটি ৩৬ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সেবা প্রদান করছে। সম্প্রতি আরইবি একটি ইন হাউজ সার্ভে করেছে। তাতে ১০০ ভাগ এলাকা বিদ্যুতায়নের জন্য চার লাখ ৪২ হাজার কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণের প্রয়োজন; কিন্তু বিভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থার কারণে ১২ শতাংশ এলাকা বিদ্যুতায়ন করা সম্ভব নয়। তাই আরইবি ওই এলাকাকে গ্রিডবর্হিভূত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে লাইনের আয়তন দাঁড়ায় তিন লাখ ৯০ হাজার কিলোমিটার।
কাজের অগ্রগতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮৩টি উপকেন্দ্রের মধ্যে ৭০টির জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বাকি ১৩টির ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। ৭০টির ভূমি অধিগ্রহণ মূল্য বরাদ্দের চেয়ে কম হওয়ায় ব্যয় ১৫ কোটি ৬৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা কমছে। ১৫ হাজার কিলোমিটার নতুন করে যুক্ত হওয়াতে পরামর্শক খাতে ব্যয় ৩৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ৪৪ হাজার কিলোমিটার লাইন নির্মাণের স্থানে গত নভেম্বর পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৪২৬ কিলোমিটার নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। ৮৩টি উপকেন্দ্রের মধ্যে ৫০টি উপকেন্দ্র নির্মাণাধীন। যার মধ্যে ১০টির ৫০ শতাংশ, ১১টির ৪০ শতাংশ এবং ২৯টির ২০ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৩৩টি উপকেন্দ্র নির্মাণের জন্য দরপত্র মূল্যায়নাধীন আছে। আগামী ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে এই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ৩৫টি উপকেন্দ্রের ক্ষমতা বর্ধনের কাজ শেষ হয়েছে।
পবিস সূত্র জানায়, ধারণক্ষমতার চেয়ে পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারগুলোতে আবাসিক গ্রাহক সংযোগ অনেক বেশি। আবার প্রতিটি আবাসিক সংযোগে লোড এক কিলোওয়াট হলেও সেখানে এটি অতিক্রম করছে। ফলে ট্রান্সফরমারগুলো ধারণক্ষমতার বাইরে ওভারলোডেড হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পবিসের ট্রান্সফরমারগুলোর মধ্যে ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ এখন ওভারলোডেড কারণে ঝুঁকিপূর্ণ। পবিসের ৭৭টি এলাকায় গড়ে সিস্টেমলস এখন ১২.৭৯ শতাংশ। ফলে এখন ৭০ হাজার ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ৯২ কোটি ৪৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। পবিসের নিজস্ব পরামর্শকের মাধ্যমে এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য পিইসি সভা থেকে বলা হয়েছে। এতে করে এই খাতে ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনা যাবে। এখন এই ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা।