মায়ের প্রতি ভালোবাসা শাশ্বত-চিরন্তন। দুনিয়ায় মা শব্দের চেয়ে অতি আপন শব্দ আর নেই। আজ বিশ্ব মা দিবস। প্রতি বছরই ক্যালেন্ডার ধরে দিবসটি আসে, চলেও যায়। দিবসটি ঘিরে এবারও মাকে উপহার দেয়া হবে। যাদের মা দুনিয়ায় নেই-তারা কাঁদবে, মায়ের আবেগঘন স্মৃতিতে ভাসবে। কেউ আবার একের পর এক পোস্ট করে যাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শেয়ার করবে মায়ের সঙ্গে ছোটবেলার স্মৃতি।
মাকে অনেক ‘ভালোবাসি’ বলার কোনো দিনক্ষণ নেই। তাই কেউ কেউ বলে উঠেন, মাকে ভালোবাসার দিন-দিবস নেই। মা শাশ্বত-চিরন্তন। তবে কেউ কেউ পাল্টা যুক্তিও দেন। তারা বলেন, দিবস মানুষকে আলোড়িত করে। মা দিবস নিশ্চয়ই পৃথিবীর যে কোনো দিবসের চেয়ে উত্তম ও আনন্দের। দিবসটি উপলক্ষ্যে একটা দিন বিশেষভাবে মায়ের জন্য উৎসর্গ করা যায়। বিশেষ উপহার দেওয়া হয় মাকে। ভালোবাসায় চোখে জল আসে। সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ করিম বলেন, মায়ের সান্নিধ্যে যে সুখ-শান্তি আর তৃপ্তি-তা অন্য কোথাও মিলবে না। ছোট বেলায় মায়ের পাশে পাশেই ঘিরে থাকতাম। শিক্ষা জীবনে সুযোগ পেলেই ছুটে যেতাম মায়ের কাছে-এখনও ঠিক তাই।
কর্মজীবন আর ব্যস্ত এ শহরে থেকে-খানিকটা সুযোগ পেলেই মায়ের কাছে ছুটে যাই। মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকি, আদর করি-ঠিক যেমন আমাকে মা করতেন, করেন। সাংবাদিক মনির হোসেন মায়ের কথা বলতেই টলমল চোখে বলে উঠলেন, প্রায় এক যুগ হল মাকে হারিয়েছি। আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন। মায়ের শূন্যস্থান কখনও পূরণ হয় না। মায়ের ভালোবাসা স্বার্থহীন, শর্তহীন। কত মুখ দেখি-মায়ের মুখ দেখি না, ওই রকম আদর পাই না। সাংবাদিক হাবিবুর রহমান খান বললেন, মা আছেন-এটাই সবচেয়ে বড় খুশির বিষয়। করোনায় মা ভালো আছেন- সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া, তিনি মাকে সুস্থ রেখেছেন। প্রার্থনা করি, পৃথিবীর সব মায়েরা যেন সুস্থ থাকেন, ভালো থাকেন। রাজধানীর ব্যাংক কর্মকর্তা সামসুন্নাহার হীরা জানালেন, তার বাবা নেই। মা বেঁচে আছেন- মা’ই এখন তার সব। সবচেয়ে বেশি আলাপ হয় মায়ের সঙ্গে। মা ক্যান্সারে আক্রান্ত। মোবাইলে আনন্দ নিয়ে কথা বলেন, ভিডিও কল করেন। এদিকে যুক্তরাজ্যের ‘সেইনসবারিস মোবাইল’ পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশটিতে প্রতি ১০ জন নারীর ৬ জনই তাদের মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে কথা বলেন।
দিবসটি উপলক্ষে মাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাবে সন্তানরা।
কেউ মাকে ফুল দেবে। কেউ দেবে কার্ড, বিভিন্ন উপহার। মাকে সঙ্গে নিয়ে কেক কাটা বা বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজনও হবে। কেউবা এসব না করে শুধুই বলছেন, ‘মা, তোমায় অনেক ভালোবাসি।’ পা ছুঁয়ে সালাম করে জড়িয়ে ধরবে-আনন্দে কাঁদবে। সন্তান কৃষক, তারকা কিংবা যে কোনো পেশার হোক, আজ তারা শুধুই মায়ের সন্তান।
আধুনিক মা দিবসের প্রচলন হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দিবসটির প্রবক্তা আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস। তার মা অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ছিলেন একজন শান্তিবাদী সমাজকর্মী। তিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯০৫ সালে অ্যান মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন। সব মাকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি দিবস প্রচলনের লক্ষ্যে সচেষ্ট হন তিনি। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা দিবস’ ঘোষণা করেন। পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হতে থাকে।