নতুন ‘অস্ত্র’ প্রতিযোগিতায় চীনকে হারাতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র

দুনিয়ার ইন্টারনেট ব্যবস্থা কে নিয়ন্ত্রণ করবে তা যেন হয়ে উঠেছে অস্ত্র প্রতিযোগিতার মতোই। যে কারণে, ‘ইন্টারনেট’ বিশ্বের ‘নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার’ বিষয় হয়ে উঠেছে। আর প্রতিযোগিতায় চীনকে হারাতে মরিয়া আমেরিকা তার মিত্র দেশগুলোর উপর চাপ বাড়াচ্ছে। একদিকে ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের আলোচনা হচ্ছে ওয়াশিংটনে, অন্যদিকে সতর্ক করা হচ্ছে পোল্যান্ডকে। ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, চীনা সংস্থা হুয়াওয়েকে পঞ্চম প্রজন্মের (ফাইভ জি) ইন্টারনেট পরিকাঠামো বাস্তবায়নের কাজ দিলে পোল্যান্ডে আমেরিকার স্থায়ী সেনা ঘাঁটি স্থাপনের প্রকল্পও ঝুলে যাবে। শুধু তাই নয়, মার্কিন কর্তারা জার্মানিতেও ছুটে গিয়েছেন, চীনের হুয়াওয়ের বিষয়ে তাদের আশঙ্কার কথা জানাতে। মার্কিন সংবাদপত্র দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ২৭ জানুয়ারি সংখ্যার মূল শিরোনাম করেছে, ‘ইউএস স্ক্র্যাম্বলস টু আউটরান চায়না ইন নিউ আর্মস রেস।’

ফাইভ জি প্রযুক্তির ইন্টারনেট ব্যবস্থা কার্যকর হয়ে গেলে ব্যবহারকারীরা প্রথমেই যেটা খেয়াল করবেন, তা হচ্ছে গতি। এই উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবস্থা গড়ে উঠলে বিস্তৃতি লাভ করবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার। সমস্যা হচ্ছে, ফাইভ জি ইন্টারনেট ব্যবস্থা কার্যকরে জটিল ও অত্যাধুনিক যে সফটওয়্যার ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে, তার যেকোনো রকম পরিবর্তন করা সম্ভব হবে ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতেই। ফলে যার হাতে ইন্টারনেটে ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকবে তার পক্ষে বিপুল পরিমাণ তথ্য পরিবর্তন ও কপি করার সুযোগ চলে যাবে। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ফাইভ জি ইন্টারনেট ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ যার হাতে যাবে সে আগামী এক শ’ বছর দুনিয়ার নেতৃত্বে থাকবে।

যদি চীনের হুয়াওয়ে ফাইভ জি ইন্টারনেট পরিকাঠামো বাস্তবায়নের কাজ করে তাহলে পরিকাঠামো বাস্তবায়নের সঙ্গে যে অর্থনৈতিক ও নজরদারির সুযোগ রয়েছে, তা হাতছাড়া হয়ে যাবে আমেরিকার। হোয়াইট হাউসের আশঙ্কা, চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে তাদের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ফাইভ জি ইন্টারনেট পরিকাঠামো তৈরি করলে সেখানে তারা গোপন সুযোগ রাখবে আমেরিকার উপর সামরিক-অর্থনৈতিক নজরদারির। আমেরিকা তাই নেমেছে নতুন যুগের অস্ত্র প্রতিযোগিতায়। ফাইভ জি ইন্টারনেট ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখাই যার একমাত্র লক্ষ্য।

ব্রিটেনের সঙ্গে চীনের হুয়াওয়ের একপ্রস্থ আলোচনা হয়েছে ফাইভ জি ইন্টারনেট পরিকাঠামো গড়ে দেওয়ার। এরপরই ওয়াশিংটন তা থামাতে ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী জেরেমি হান্টের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ব্রিটেনকেই এখন বেছে নিতে হবে আমেরিকা না চীন। অন্যদিকে, পোল্যান্ডকে সরাসরি বলে দেয়া হয়েছে, তারা যদি হুয়াওয়েকে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট পরিকাঠামো গড়ার কাজ দেয় তাহলে তাদের সঙ্গে আমেরিকার সামরিক সহযোগিতা স্থগিত করা হবে। পোল্যান্ডে ‘ট্রাম্প ফোর্ট’ নামে মার্কিন সেনাবাহিনীর যে স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে, তা বন্ধ করে দেয়া হবে।

মার্কিন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আগের মতো হার্ডওয়্যারে ‘ব্যাকডোর’ না খুঁজে বর্তমান পরিস্থিতিতে চীনা আইন-কানুনই যে বিপদের কারণ, সেদিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। আমেরিকার ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স সেন্টারের’ উইলিয়াম আর ইভানিয়া মন্তব্য করেছেন, চীনে সরকারি আর বেসরকারির মধ্যে পার্থক্য খুব কম। চীন চাইলেই যেকোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য করাতে পারে। ফলে যারা চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার করবে, হুয়াওয়েকে সরকারি আদেশ মানতে বাধ্য করার মাধ্যমে সেসব প্রতিষ্ঠানের ওপরও নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যাবে চীনের সরকার। ২০১৭ সালের জাতীয় গোয়েন্দা আইনে চীন সরকার বলেছে, নজরদারির জন্য যেখানেই দরকার হোক না কেন, চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদেরকে সাহায্য করতে বাধ্য। ফলে প্রমাদ গুনছে হোয়াইট হাউস!

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top