শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, মানসম্মত বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স থাকবে আর অন্যগুলোয় এই কোর্স উঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স উঠিয়ে দেওয়া বেসরকারি কলেজগুলোয় ছোট ছোট শর্ট কোর্স চালু করা হবে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত বৈঠকও অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার (৩ মে) শহিদ জননী জাহানারা ইমামের জন্মদিন উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘সব কওমি মাদ্রাসা সরাসরি অবশ্যই সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে শীর্ষক’ আলোচনা সভায় তিনি এ কথা জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমার মতো জনপ্রতিনিধিদের কারণেই আসলে বেসরকারি কলেজগুলোতে অনার্স-মাস্টার্সের ছড়াছড়ি হয়েছে। এতে শিক্ষিত বেকার তৈরি হয়েছে। এখন তো যথেষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে জেলা পর্যায়ে। আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ করেছিলাম ২০১৯ সাল থেকে আর অনার্স-মাস্টার্স কোর্স খোলা না হয়, তারা কথা রেখেছেন। আর নতুন করে দেননি। আমরা প্রক্রিয়াটি শুরু করেছি, যে কয়টি কলেজে খুব দক্ষতার সঙ্গে সফলতার সঙ্গে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু আছে, যেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষক আছে জায়গায় রেখে বাকি সব কলেজে অনার্স-মাস্টার্স তুলে দিয়ে শুধুই ডিগ্রি পাস কোর্স থাকবে আর ছোট ছোট অনেক শর্ট কোর্স হবে, ডিপ্লোমা হবে। যেগুলো দক্ষতা নির্ভর, পুরোপুরি কর্মমুখী হবে। যাতে শিক্ষার্থীদের চাকরি বা আত্মকর্মসংস্থান হবে। সেটার জন্য কাজ চলছে। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অনেক বড় আকারে সভা করেছি। আমরা এই কাজটি এগিয়ে নিতে চাই আমরা আর বেকার চাই না, দক্ষ মানুষ চাই। দক্ষতা অর্জন করার পর যদি কোনও শিক্ষার্থী অনার্স-মাস্টার্স করতে চান, তাহলে সেটা যেন করতে পারেন। সে জন্য আমরা বয়সের বাধা তুলে দিতে চাই। আমরা এখন জীবনব্যাপী শিক্ষার কথা বলছি। সেখানে বয়সটা যেনও বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
উল্লেখ্য, দেশে ৩১৫টি এমপিওভুক্ত বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স বর্তমানে চালু রয়েছে। এসব কলেজে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষক সরকারি বেতন-ভাতার অংশ পান না। অন্যদিকে কলেজগুলো থেকে ঠিকমত বেতন দেওয়া হয় না।
করোনা সংকটের কারণে বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা এখন বিনা বেতনেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানিয়েছেন অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জনবল কাঠামো অনুযায়ী ডিগ্রিস্তর পর্যন্ত পরিচালিত এমপিওভুক্ত কলেজগুলোয় ১৯৯৩ সালে অনার্স-মাস্টার্সের অনুমোদন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিধিবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত স্কেলে শিক্ষকদের মূল বেতন দেওয়ার শর্তে অনার্স-মাস্টার্সের বিষয় অনুমোদন নেয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কলেজের টিউশন ফি থেকে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার নির্দেশনা দেয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এই পর্যায়ে কলেজগুলোর জনবল কাঠামোতে স্থান পায় না অনার্স ও মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের পদ। ফলে সরকারি বিধিবিধানের আলোকে এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ বঞ্চিত হন তারা।
এই অবস্থায় গত বছর থেকে শিক্ষকরা আন্দোলন করে আসছেন এমপিওভুক্তির দাবিতে। সর্বশেষ অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা বেতন-ভাতার সরকারি অংশের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘অনার্স-মাস্টার্স কোর্স তুলে দিলেও শিক্ষকদের চাকরি ও আর্থিক বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় সে ব্যবস্থা থাকবে।’
ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সুজিত সরকার, ড. মুজিবুর দফতরি, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, আনসার আহমেদ উল্লাহ, সাব্বির খান, মমতাজ লতিফ, ইকরাম চৌধুরী, হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতারা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।