‘অব কি বার দোশো পার’ অর্থাৎ এবার দুশো আসন পার করবো- এমন স্লোগান তুলেছিলেন মোদী ও অমিত শাহ। কিন্তু বিজেপির সেই স্লোগান ব্যুমেরাং হলো বাংলার দিদির দিকে।
হ্যাটট্রিক করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বাংলা আরও একবার আস্থা রাখলো দিদির ওপরেই। ২১৩ আসন নিয়ে তৃতীয়বারের মতো রাজ্যে সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন দিদি। তবে রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো দল বিপুল আসনে জয়ী কিন্তু হেরে গেলেন দলের প্রধান। দুই আসনের ভোট এখনো স্থগিত রয়েছে।
মমতার হার নিয়ে রোববার (২ মে) দুপুরের থেকে নাটকীয় পট পরিবর্তন হয়েছিল। কিন্তু ঠিক কী ঘটেছিল? ঘটনার সূত্রপাত, এক প্রথমসারির সংবাদ সংস্থা হঠাৎ করে প্রকাশ করে মমতা ১২শ বেশি ভোটে জিতেছেন। তখন নন্দীগ্রাম আসনের গণনা চলছে। সংবাদসংস্থা এএনআই এমন এক বিশ্বাসযোগ্য সংস্থা যাকে ভারতের প্রথমসারির পত্রিকাগুলোও অস্বীকার করতে পারে না। ফলে ছড়িয়ে যায় ঘটনাটি।
তখনও নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দেয়নি মমতার হার-জিত নিয়ে। ফলে এর দায় কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তায় না। পরে যখন ফলাফল শিটে জানা যায় মমতা হারছেন এবং গণনা শেষ হলে নিয়ম অনুযায়ী সব রাজনৈতিক দলকে ওই শিটে সই করতে হয় তখন বিজেপিসহ সব নির্বাচনী এজেন্ট সই করলেও সই করতে অস্বীকার করে তৃণমূল কংগ্রেস এবং পুনর্গণনার দাবি জানায়।
নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দেয় সবার সামনেই গণনা হয়েছে। কেন পুনর্গণনা চাওয়া হচ্ছে স্পষ্ট করে না জানালে এ তথ্য ভিত্তিহীন বলে ধরা হবে। এরপরই তৃণমূলের দলবল হলদিয়ার রাস্তা অবরোধ করে। অপরদিকে কলকাতা প্রধান নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে সিইও আরিজ আফতাবের সঙ্গে দেখা করে তৃণমূলের এক ডেলিগেশন টিম। আধাঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক হওয়ার পর সেখানেও জানানো হয় পুনর্গণনা আর হবে না। তারপরই তৃণমূল সিদ্ধান্ত নেয় তারা হাইকোর্ট যাবে। ফলে ঠিক কত ভোটে মমতা পরাজিত হয়েছেন সরকারিভাবে ঘোষণা হয়নি।
তবে ফলাফলে শিট দেখে ধারণা করা যাচ্ছে নন্দীগ্রামে মমতা ১৯শ ৫৩ বা এর একটু ভোটে একটু কম ভোটে পরাজিত হয়েছেন। তবে হার যে হয়েছে সে কথা এক বাক্যে জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
অপরদিকে, বিজেপিকে এবারের মতো রথ থামাতে হয় ৭৭ আসন নিয়ে। ক্ষমতা দখল না করতে পারলেও গতবারের ৩ থেকে ৭৭টি আসন মোটেও খারাপ ফল নয়, এমটাই জানিয়েছন রাজ্য বিজেপির সভাপাতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, মানছি রাজ্যবাসী মমতাকেই চেয়েছেন। তাই এই ফল। তবে মমতাও পশ্চিমবঙ্গে একদিনে এই সফল পথ দেখেননি। বহু বছর পর ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসেন। তবে একুশের নির্বাচন এও দেখালো দল জিতলেও সুপ্রিমো হারলো। রাজ্যবাসীকে ধন্যবাদ আমাদের এতগুলি আসন দেওয়ার জন্য।
ফলে পশ্চিমবঙ্গে এখন বিরোধীদল বলতে শুধুই বিজেপি। ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেলো বাম এবং কংগ্রেস। একটি মুখ থাকছে না অ্যাসেম্বলিতে। মাত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় আসনে একটি আসন পেয়েছে আব্বাস সিদ্দিকির দল ইন্ডিয়ান স্যেকুলার ফ্রন্ট।
তবে এটা বাস্তব একুশের নির্বাচনে বাংলা তার নিজের মেয়ের উপরেই ভরসা রাখলো। মোদী-অমিত শাহ এমনকী সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাসহ বিজেপির শীর্ষস্তরের প্রায় সব নেতানেত্রীদের লাগাতার রাজ্যে হাইভোল্টেজ প্রচার, মাটি কামড়ে পড়ে থাকাও কাজে এলো না এ যাত্রায়। পরিবর্তন নয়, রাজ্যবাসী ভরসায় সিলমোহর পড়লো মমতার প্রত্যাবর্তনেই।