আরবের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ ইয়েমেন। এর ওপর মধ্যপ্রাচ্যের মোড়ল সৌদি নেতৃত্বাধীন গত ছয় বছর ধরে দেশটির ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আধিপত্য বিস্তারের এই লড়াইয়ে ইয়েমেনের কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৩৬ লাখ মানুষ। দেশটির অবকাঠামো খাত প্রায় ধ্বংসের মুখে। খাদ্য সংকটে আছে দেশটির এক কোটি ৬২ লাখ মানুষ।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুদ্ধের ফলে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অপুষ্টির শিকার ইয়েমেনের নারী ও শিশুরা। তীব্র অপুষ্টির শিকার ১২ লাখ নারী ও ২৩ লাখ শিশুরু জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রয়োজন। এর মধ্যে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু ঝুঁকিতে আছে চার লাখ শিশু।
সেভ দ্য চিলড্রেনের হিসেবে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তীব্র অপুষ্টিতে মারা গেছে ৮৫ হাজার শিশু। জাতিসংঘের হিসেবে দেশটির এক কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষ থেমে মাত্র এক কদম দূরে রয়েছে।
প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের সুবিধা না পাওয়ায় ২০১৭ সালে ইয়েমেনে ভয়ংকর রূপে ছড়িয়ে পড়েছিল কলেরা রোগ। ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশটিতে কলেরায় সাত হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। অথচ সৌদি আরব যুদ্ধ বন্ধতো দূরের কথা এক প্যাকেট স্যালাইনও ইয়েমেনে পাঠায়নি। মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো দেশটিতে এখন বাড়তে শুরু করেছে করোনার সংক্রমণ। এ পর্যন্ত এক হাজার ২০০ এর বেশি ইয়েমেনি করোনায় মারা গেছেন।
সম্প্রতি করোনায় বিপর্যস্ত ভারতে অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বন্ধুরাষ্ট্র ভারতকে ৮০ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন উপহার দিয়েছে সৌদি আরব। প্রতিবেশী দেশ ও স্বধর্মের মানুষকে তিলে তিলে না খাইয়ে মারলেও হাজার যোজন দূরের ভারতের প্রতি কেন এতো ভালোবাসা সৌদির?
এর উত্তরটি হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে সৌদির রয়েছে হাজার হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্যিক সম্পর্ক। ইয়েমেনের সঙ্গে কোনো বাণিজ্যিক সম্পর্ক নেই সৌদির, আছে আধিপত্যবাদের সম্পর্ক। ভারতের চতুর্থ বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার হচ্ছে সৌদি আরব। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুই দেশের ২৬ দশমিক ৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে।
২০১৬ সালে সৌদি যুবরাজ ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিজের বড় ভাই বলে আখ্যা দিয়েছেন। ভারতে বিদ্যুৎ, পরিশোধন, পেট্রোকেমিক্যাল ও খনিতে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। নিরাপত্তা বা প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা থেকে শুরু করে বিনিয়োগ, কৃষি – সব কিছুই থাকবে। অপরিশোধিত তেলের ক্ষেত্রে ভারতের চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ এবং এলপিজির ৩২ শতাংশের উৎস সৌদি আরব। সম্প্রতি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মধ্য থেকে অয়েল-টু-কেমিক্যাল (ওটুসি) ব্যবসায় ২০ শতাংশ অংশীদারিত্ব নেওয়ার জন্য আলোচনা চালাচ্ছে সৌদি তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরামকো।
দুর্বল ইয়েমেনিদের নির্মমভাবে প্রতিদিন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে প্রাণ না কাঁপলে কিন্তু বাণিজ্যিক অংশীদার ভারতের সংকটকালে দু:খে মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে সৌদি শাসকদের।