গৃহবধূ ও যুবককে জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতন, ঘরে তালা

মাদারীপুরে পরকীয়া প্রেমের অভিযোগ তুলে শালিস বসিয়ে এক গৃহবধূ ও এক যুবককে জুতাপেটা করা হয়েছে। পরে তাদের জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম ঘুরিয়ে ঘরে তালা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

১৯ এপ্রিল জেলার রাজৈর উপজেলার সুতারকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি প্রথমে গোপন থাকলেও পরে লোকমুখে জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

এ ঘটনায় মামলা হলে রাজৈর থানা পুলিশ তিন শালিসকারীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর গ্রামের এক ব্যক্তির (৩৮) সঙ্গে রাজৈর উপজেলার সুতারকান্দি গ্রামের এক গৃহবধূর (৪৬) পরিচয়ের সূ্ত্রে উভয়ের বাড়ি যাতায়াত ছিল। ১৯ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ওই যুবক সুতারকান্দি গ্রামে বেড়াতে আসে। কিছুক্ষণ পরে একই বাড়ির কালু ফকির, ইমরান ফকির, শাকিব আকন, রানা ফকির, শামীম ফকিরসহ ৮/১০ জন মিলে তাদের দুইজনকে বেঁধে ফেলে বাড়ির উঠানে শালিস বসায়। পরে শালিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ব্যক্তি এবং গৃহবধূকে ১০০ বার করে জুতাপেটা করা হয় এবং তাদের জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম ঘুরানো হয়। পরে ঘরে তালা ঝুলিয়ে ওই গৃহবধূর পরিবারকে এলাকা থেকে বের করে দেওয়া হয়।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) রাতে শালিসে উপস্থিত কালু ফকির, ইমরান ফকির, শামীম ফকিরসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৮/১০ জনে রাজৈর থানায় মামলা দায়ের করেছে ওই গৃহবধূর স্বামী। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কালু ফকির, আজিজুল ফকির ও শাকিব আকনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ বলেন, ‘ওরা আমাকে ও আমার ভাইকে জোর করে বেঁধে সবার সামনে ১০০ জুতার বাড়ি দিয়েছে। জুতার মালা পরিয়ে সারা গ্রাম ঘুরিয়েছে। আবার আমার ঘরে তালা দিয়েছে। এখন ভয়ে নিজের বাড়ি যেতে পারছি না।’

এলাকার ইউপি সদস্য তারা মিয়া বেপারী বলেন, ‘ধর্মের ভাই-বোনকে বিচারের নামে প্রহসনের শালিস বসায়। শালিসে আমার কোনো কথাই তারা শোনেনি। এমনকি ওই নারীর কোনো কথা না শুনে কালু ফকির, ইমরান ফকির, শামীম ফকির, রানা ফকির নিজেদের ইচ্ছেমত রায় ঘোষণা করে।’

বাজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ‘কাজটি যারা করেছে, যারা আইন হাতে তুলে নিয়েছে, তাদের এবং এর পেছনে ইন্ধনদাতাদের বিচার হওয়া উচিৎ।

ওই গৃহবধূর স্বামী বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করছি। তার চরিত্র খারাপ হলে আমি আগে জানতাম। আমার স্ত্রী অপরাধ করে থাকলে আমি বিচার করতাম। উনারা কেন আমার স্ত্রী ও আমার আত্মীয়কে এভাবে অপমান করলো। তারা ঘরে তালা দিয়ে বের করে দিয়েছে। এখন আমরা ঘরে যেতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলে মেয়ে আছে। তাদের বিয়ে দিয়েছি। নাতি-নাতনি রয়েছে। আমারা কীভাবে মানুষের মুখ দেখাব। আমি এর বিচার চাই।’

শালিসের নেতা কালু ফকির বলেন, ‘ওই মহিলা খুবই বাজে চরিত্রের লোক। তাই একটু শাসনের জন্য শালিস করা হয়। শালিসে অনেক মাতুব্বর ছিলো। তারা সবাই মিলে এ রায় দেয়।’

রাজৈর থানার ওসি শেখ সাদী বলেন, তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। বাকি আসামিদের ধরার জন্য তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

Share this post

scroll to top