ময়মনসিংহের বাজারে বিষাক্ত তরমুজ: অনেকেই অসুস্থ

Watermelon-তরমুজশহরের ফলের দোকান গুলোতে অত্যাধুনিক ইনজেকশনের সিরিঞ্জের (7681M94 Mfr. No. 86313) মাধ্যমে বিষাক্ত লাল রং ও মিষ্টি সেকারিন পানি মেশানো হচ্ছে। জানাযায়, ইনজেকশনের সুই বাঁকিয়ে সজোড়ে তরমুজের বোঁটা বা নিচের অংশ দিয়ে কৌশলে কেমিক্যাল মেশানোর কাজ করা হয়। আর সিরিঞ্জের মাধ্যমে ১ লিটার থেকে ৫ লিটার পর্যন্ত কেমিক্যাল মেশানোর কারণে তরমুজ হয়ে ওঠে টকটকে লাল রঙের এবং স্বাদেও তা হয় মিষ্টি এবং বেড়ে যায় ওজন। এই তরমুজগুলোই দোকানে ছুরি দিয়ে কেটে পাকা দেখিয়ে বেশি দাম আদায় করা হয়।

ময়মনসিংহ শহরের নতুন বাজার, চড়পাড়া ও স্টেশন এলাকার তরমুজ বাজারে যেসব দোকান রয়েছে তাদের বেশিরভাগই এমন পদ্ধতি অবলম্বন করছে। তারা তরমুজগুলো শহরে ঢোকানোর আগেই বিষাক্ত লাল রং ও মিষ্টি সেকারিন পানি পুশ করে পরে বাজারজাত করে। যেকারণে কেজি দরে তরমুজ বিক্রিতে প্রশাসনের বাঁধাকে বড় হুমকি হিসেবে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের মতে, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে তাদের যতই জরিমানা করা হোক তারা কখনও পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি করবে না। তবে এর পেছনে সিরিঞ্জের মাধ্যমে ১ লিটার থেকে ৫ লিটার পর্যন্ত কেমিক্যাল মেশানোর কারণে ওজন বেড়ে যাওয়াকেই মূল টার্গেট হিসেবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

এছাড়া তরমুজ যেন নষ্ট না হয়, সে কারণেও মেশানো হচ্ছে কেমিক্যাল। বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো তরমুজ খেয়ে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিশুরা। খাদ্যদ্রব্যে ক্ষতিকারক কীটনাশক, নিষিদ্ধ রং আর বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানোর ফলে কিডনি, লিভারের সমস্যা বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে তরমুজ খেয়ে অসুস্থ হয়েছেন এমন বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানাযায়, সুন্দর দেখে তরমুজ কিনে নেয়ার পর বাসায় নিয়ে তরমুজ কাটতেই প্রচুর লাল রংয়ের রস দেখা যায়। ইফতারের সময় তরমুজকে ব্ল্যান্ড করতে গেলে উপরে রংয়ের প্রলেপ পড়ে। তখনও তারা বুঝতে পারেনি ঘটনা। ওই তরমুজের জুস খাওয়ার কয়েক ঘন্টা পরই তাদের পাতলা পায়খানা শুরু হয়।

জানাযায়, তরমুজের রং লাল করার জন্য দেয়া হচ্ছে কৃত্রিম রং বাইক্সিন বা রেড ডাই -২(bixin dye or red dye-2) এবং মিস্টি করার জন্য দেয়া হচ্ছে সোডিয়াম সাইক্লোমেট(sodium cyclamate) ও স্যাকারিন ( Sacharin) ১০:১ হারে । যা সাধারণ চিনির চাইতে ৩০-৫০ গুন বেশি মিস্টি আর শুধু স্যাকারিনের ক্ষেত্রে যা ৫০০-৭০০ গুন । আজকাল বেশির ভাগ ভোগ্য পন্যেও দেয়া হচ্ছে এ কেমিক্যাল যা এক দীর্ঘ মেয়াদী বিষ বা স্লো পয়জন ।

শুধু ময়মনসিংহেরই নয়। এরকম ঝুঁকিপূর্ণ তরমুজের অসাধু ব্যবসা সারাদেশেই চালু করয়েছে। এদিকে সোমবার (২৬ এপ্রিল) পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা সানি সানোয়ার ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন তরমুজ খেয়ে তার পরিবারের ৪ জন অসুস্থ হয়েছেন। ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘তরমুজ খেয়ে আমার পরিবারের ৪ জন অসুস্থ হয়েছিল। বিষয়টি বেশ কয়েকজনের সাথে শেয়ার করলাম। দেখলাম সবাই একই অভিজ্ঞতার কথা বলল। তিনি আরও লিখেন, ‘আমার পরিবারে আপাতত তরমুজ খাওয়া বন্ধ। দোষীদের ধরতে জনস্বার্থে কাজ চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এমন আরও অনেকেই তরমুজ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

Sanwar Hossain Sunny

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীম আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, অনেকেই তরমুজ কেনার সময় খানিকটা অংশ কেটে পরখ করে নেন, তরমুজটি লাল কি না, তাও দেখে নেন। তবে একদম টকটকে লাল তরমুজ খাওয়া ঠিক নয়। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করার মাধ্যমে তরমুজের রং লাল করা হয়। তাই কেনার সময় স্বাভাবিক রঙের তরমুজ কিনুন।

এছাড়াও বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে তরমুজ বিক্রি হত ‘পিস’ হিসেবে কিন্তু এখন তা বিক্রি হয় কেজিতে। কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী সিরিঞ্জের সুই বাঁকিয়ে তরমুজের বোঁটা দিয়ে যে পানি তরমুজে পুশ করছে তাও আবার দুষিত ও ‘নোং’রা পানি।

এসব খেয়ে ডায়রিয়া, বমি, পেটব্যাথাসহ নানান ধরণের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। অসাধু ব্যবসায়ীদের এসব কর্মকাণ্ডের লাগাম টানতে বাজার মনিটরিং এবং এতে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি সাধারণ মানুষের। এছাড়া মনিটরিং শেল গঠনের পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সচেতন হওয়া এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এবার চলুন দেখি তরমুজে যেসব ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে সেগুলোর জন্য মানুষের শরীরে কি কি ক্ষতি হতে পারে।

সোডিয়াম সাইক্লোমেটঃ দীর্ঘদিন এ বিষ খেলে মানুষের নিম্নোক্ত প্রদাহ হতে বাধ্য,
১. ব্লাডার(মুত্রথলি) ক্যান্সার
২. টিউমার
৩. পুরুষ্ত্ব বিনস্ট হওয়া(Male fertility System or Sperm Problem)
৪. উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পাবে ও
৫. মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে ইত্যাদি ।

স্যাকারিনঃ দীর্ঘদিন স্যাকারিন খেলে যা যা ক্ষতি হতে বাধ্য,
১. অস্থিরতাঃ বিশেষত হাত ও পা কাঁপা যা ইংরেজীতে restless leg or hand syndrome বলে
২. মাথা ও পেশীতে ব্যাথা অনুভূত হওয়া
৩. পার্কিনসন্স ডিজিজ (Parkinson’s disease)
পার্কিনসনের অসুখের লক্ষণ:
– মাসল শক্ত হয়ে যাওয়া।
– হাত-পা কাঁপা।
– চলা-ফেরার গতি স্লথ যাওয়া।
– হাঁটা-চলার ধরণ পাল্টে যাওয়া।
– ব্যালেন্সের অভাব – ফলে মাঝে মাঝে মাটিতে পড়ে যাওয়া, ইত্যাদি।
৪. জয়েন্ট পেইন বা অস্থিসংযোগ স্থলে ব্যাথা ও
৫. বিষন্নতা বা depression ইত্যাদি
সর্বশেষে আসা যাক কৃত্রিম রং বাইক্সিন ডাই বা রেড ডাই-২ বা bixin dye or red dye-2
বাইক্সিন ডাইঃ
১. কিডনী প্রদাহ বাড়বে এবং মিডনী নস্ট হয়ে যেতে পারে
২. ব্লাডার বা মুত্রথলিতে পাথর হতে পারে
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাবে
৪. অনিদ্রা বা insomnia হতে পারে ও
৫. শরীরের বিভিন্ন অংশে এলার্জি দেখা দিতে পারে।

Share this post

scroll to top