ময়মনসিংহের রেলওয়ে স্টেশন মানেই হকারদের হাঁকডাক, যাত্রীদের আসা যাওয়ায় মুখরিত জনাকীর্ণ স্থান। “ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে/রাত দুপুরে অই/ট্রেন চলেছে ট্রেন চলেছে ট্রেনের বাড়ি কই?/একটু জিরোয় ফের ছুটে যায়/মাঠ পেরুলেই বন/পুলের ওপর বাজনা বাজে ঝন ঝনা ঝন ঝন।/দেশ বিদেশে বেড়ায় ঘুরে /নেইকো ঘোরার শেষ। / ইচ্ছে হলেই বাজায় বাঁশি
দিন কেটে যায় বেশ।—–” -অনেকদিন পার হলো শোনা যায় না ট্রেনের হুইসেল। চিরচেনা রেলওয়ে স্টেশন আজ জনমানবহীন নিস্তব্ধ !
কেউ কি ভেবেছিলেন রেল স্টেশনের এমন দৃশ্য দেখতে হবে? রেল স্টেশনের নিরব কান্না শুনতে প্রস্তুত ছিল কেউ? নিথর পরে আছে রেলের জমজমাট আঙিনাগুলো। কান পেতে শুনি কতনা আহাজারি, কতনা বোবা কান্না ! এ কান্না কেবল ইট-পাথর আর লোহার নয়, এ কান্না হাজারো শ্রমিকের, হাজারো পরিবারের !
একটি স্টেশনকে ঘিরে গড়ে উঠে কিছু মানুষের জীবিকা। স্টেশনে সারাদিন ঘুরে যে হকার স্বপ্ন বুনতো বাঁচার, আজ হাহাকার তাদের ঘরে। কান পাতলে কি তবে সেসব পরিবারের কান্না শোনা যায়!
বিশ্ব আজ এক নির্মম সত্যের মুখোমুখি। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত করেছে গোটা পৃথিবীকে। অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে মানবজাতির অন্যতম কৌশল ঘরে থাকা। বৈশ্বিক এ মহামারির ফলে স্টেশন ছেড়ে ঘরবন্দি আজ স্বল্প আয়ের হকার ও টঙ দোকানদাররা। ঐসব অসহায় পরিবারের ছোট্ট শিশুটা করোনা বোঝেনা, ক্ষুধার্ত হলে কেঁদে সে জানান দেয়। সত্যিই ! পেট তো করোনা বোঝেনা। স্টেশনের প্লাটফর্মে যে কুলি সারাদিন কাজ করে স্ত্রী সন্তানের জন্য দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতো আজ সে ঘরবন্দি থাকায় সেই ঘর থেকেও ভেসে আসে স্বপ্ন ভাঙার ধ্বনি।
প্লাটফর্মে এখন আর টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য চোখে পড়ে না! মাইকে শোনা যাচ্ছে না ট্রেন আগমনী কিংবা ছাড়ার ঘোষণা। হাঁকডাক নেই হকারদের, কুলি আর মজুরের! চারিদিকে সুনসান নিরবতা। এ নিরবতা না হোক খেটে খাওয়া মানুষগুলোর প্রতি রাষ্ট্রের নিরবতা। রাষ্ট্রের ছোঁয়ায় এখানকার মেহনতি মানুষ সজীবতা ফিরে পাক। এ নিরবতা কেবলি স্টেশনের বোবা কান্না হয়ে থাক !