আজ ১৭ এপ্রিল গফরগাঁওয়ে বোমা হামলার পঞ্চাশ বছর পুর্ণ হলো। সেদিন পাকবাহিনীর বোমা আর গুলিবর্ষণে ১৯ জন শহীদ হন। ১৯৭১ সালের ওইদিন সকালে প্রতিদিনের মতোই জমে উঠেছিল গফরগাঁও বাজার। বাসা-বাড়ি আর দোকানে উড়ছিল স্বাধীনবাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা। তৎকালীন পাকবাহিনীর দু’টি জঙ্গি বোমারু বিমান প্রথমে গফরগাঁও বাজারের আকাশে কয়েকটি চক্কর দিয়ে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে বোম্বিং করে। পরে ফিরে এসে গফরগাঁও বাজারের কাইয়ুম মার্কেট ও মধ্যবাজারে কয়েকটি বোমা বর্ষণ করে। এর কিছুক্ষণ পরে নির্বিচারে মেশিনগানের গুলিবর্ষণ শুরু করে। পাকাবাহিনীর বর্বর বোমাবর্ষণ আর গুলিতে কমপক্ষে ১৯ জন শহীদ হন এবং অগণিত মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, গফরগাঁও বাজারে প্রথম বোমাটি ফেলা হয় মধ্যবাজারে আব্দুল বেপারীর তিনতলা ভবনটির কোনায়। বিশিষ্ট ব্যবসায়ি ও ভবনের মালিক আব্দুল বেপারি ভবনের নিচে অবস্থানরত মানুষদের সরিয়ে বিমান দেখতে চাইলে সেই বিমান থেকে নিক্ষিপ্ত বোমায় তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। বিমান হামলায় নিহতদের মধ্যে ১৯ জনক শনাক্ত করা সম্ভব হয়। নিহতরা হলেন গফরগাঁও বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি আব্দুল বেপারী, পুখুরিয়া গ্রামের সেনাসদস্য মীর শামছুদ্দিন, রাঘাইচটি গ্রামের আব্দুুল মতিন, শিলাসী গ্রামের আব্দুল মজিদ, ছোবেদ আলী, আব্দুল হাই, ইছর আলী, আব্দুল গফুর, কলা মিয়া, ঘাগড়া গ্রামের মীর জিয়াউল হক, ষোলহাসিয়া গ্রামের যমুুনার মা (হরিজন), তেতুলিয়া গ্রামের আব্দুল জলিল, ভুলু মিয়া, চংবিড়ই গ্রামের আব্দুল হেলিম, আঠারবাড়ি গ্রামের মংলার বাপ, খারুয়া মুকুন্দ গ্রামের আব্দুল হাই, জন্মেজয় গ্রামের গফুর আলী এবং শ্রীপুর থানার জয়নাল ও ঢাকার গোপেন চন্দ্র্র দেবনাথ। এই গণহত্যার প্রথম শহীদ ব্যবসায়ী আব্দুল বেপারীর নামে গফরগাঁও বাজারে স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবুল হাশেমের উদ্যোগে একটি তোরণ নির্মাণ করা হয়। ১৯৭২ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম তোরণটির উদ্বোধন করেন। শহীদ আবদুল বেপারীর ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ি আমিনুল হক কামাল জানান, তোরণটি মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জল ইতিহাসের অংশ এবং গফরগাঁওবাসীর বিজয় ও স্মৃতির স্মারক। বাজারের রাস্তা প্রশস্তকরণের কারনে জরাজীর্ণ তোরণটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। তোরণটি পুন:নির্মানের জন্য ময়মনসিংহ জেলা পরিষদকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল ডিও লেটার প্রদান করেন। কিন্তু আজো তোরণটি পুন:নির্মাণ করা হয়নি। শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে ‘শহীদ আব্দুল বেপারী’র নামে তোরণটির পুন:নির্মানের দাবি জানান তিনি। ##