চীনের হাতে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম, দুশ্চিন্তায় যুক্তরাষ্ট্র

সামরিক ক্ষেত্রে চীনের অভাবনীয় অগ্রগতিতে পেন্টাগনের উদ্বেগ

শব্দের চেয়েও কয়েকগুণ দ্রুতগতিসম্পন্ন হাইপারসনিক অস্ত্র এবং মাঝারি ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রসহ অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের বেশকিছু ক্ষেত্রে চীন অভাবনীয় পর্যায়ে এগিয়ে গেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি এ সতর্কতা জানিয়েছে। এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতির দেশটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বীদের টপকে গেছে বলেও অনুমান করছে পেন্টাগন।

গত মঙ্গলবার ‘চায়না মিলিটারি পাওয়ার’ শিরোনামের এক খবরে বেইজিংয়ের সামরিক শক্তি নিয়ে পেন্টাগনের এ মূল্যায়নের কথা এসেছে। মূল্যায়নটি ‘গোপনীয় নয়’, এটি তৈরি হয়েছে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা বিভাগের রিপোর্ট থেকে। এতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামরিক ক্ষেত্রে বেইজিংয়ের বিরাট অগ্রগতির কথাই উঠে এসেছে। খবরে চীনের এ অভাবনীয় অগ্রগতির পেছনে দেশটির বৃহৎ বাজারে কাজ করা বহুজাতিক ও পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানেরও অঘোষিত দায় দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে চীনে কাজ করা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গোপন প্রযুক্তি বেইজিংয়ের সাথে ভাগ করেছে; সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়েই এশিয়ার এ শক্তিধর দেশটি এগিয়ে গেছে বলে ধারণা মার্কিন গোয়েন্দাদের।

পেন্টাগন বলেছে, ‘যেকোনো উপায়ে প্রযুক্তির উপর দখল প্রতিষ্ঠা করা’ চীন এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে নৌযানের নকশা, মধ্য ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং শব্দের চেয়েও কয়েকগুণ দ্রুত ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম এমন হাইপারসনিক অস্ত্রের বিকাশে অভাবনীয় উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। প্রযুক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ক্ষেত্রে চীন যে বহুমুখী পথ ধরেছিল, তার ফলে পিএলএ (পিপলস লিবারেশন আর্মি) এখন আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানে পৌঁছানোর দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা এর মধ্যেই শীর্ষস্থান অর্জনও করে ফেলেছে।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এসব যুদ্ধাস্ত্র বেইজিংকে আকাশ, সমুদ্র, মহাশূন্য ও সাইবার স্পেসে আধিপত্য এবং চীন ও এর আশপাশের অঞ্চলে ইচ্ছা অনুযায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ এনে দেবে বলেও আশঙ্কা মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের। পর্যবেক্ষকদের মতে, এ মূল্যায়নের মাধ্যমে পেন্টাগন মূলত তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরকে ঘিরে বেইজিংয়ের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তার উদ্বেগে পশ্চিমা বিশ্বের নজর ফেরানোর চেষ্টা করছে। চীন তাইওয়ানকে তার ভূখণ্ড বলে দাবি করে এলেও তাইপে এবং অনেক পশ্চিমা দেশই ভূখণ্ডটিকে স্বাধীন দেশ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।

স্বাধীনতাপন্থী একটি দল ক্ষমতায় আরোহণের পর থেকে তাইপের সাথে বেইজিংয়ের কূটনৈতিক টানাপোড়েনও বাড়ছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও নানাভাবে তাইওয়ানের প্রতি তার সর্বাত্মক সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছে। পেন্টাগনের মূল্যায়নে চীনের বর্তমান সামরিক ক্ষমতা দেশটির কর্মকর্তাদের তাইওয়ান দখলে উসকে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, গত চার দশক ধরে চীন কোনো যুদ্ধে না জড়ানোয় তারা খানিকটা স্বস্তিতে আছেন। তাইওয়ান দখল করতে চাইলেও ‘বাস্তব যুদ্ধের অভিজ্ঞতা’ না থাকায় পিএলএ দ্রুতই ওই পথে হাঁটবে না বলেও ধারণা তাদের।

সূত্র : রয়টার্স

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top