ময়মনসিংহে ব্যাংক, শপিংমল ও কাঁচা বাজারগুলোয় সাধারণ মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে তেমন জনসচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছেন- মানুষকে সর্তক করার পরেও তা মানছে না। সেজন্য করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
সোমবার (১২ এপ্রিল) দিনব্যাপী নগরীর ছোটবাজার ব্যাংক পাড়া, বিভিন্ন শপিংমল ও কাঁচা বাজারগুলোয় সরেজমিনে গিয়ে এমনটা দেখা গেছে।
অগ্রণী ব্যাংকে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলতে আসা ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে সারাদেশে সরকার কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। তাই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে রাখতে হবে। যেকোনো সময় বিপদ আপদ আসতে পারে। মানুষ যে হারে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে- আমরাও বিপদের মধ্যে বসবাস করছি। টাকা তুলতে এসেও বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। টাকা তুলতে দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে। ব্যাংকে স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। গ্রাহকরাও সচেতন না।’
অপর গ্রাহক হাসিব আহমেদ বলেন, ‘সমস্যা না থাকলে ব্যাংকে আজকে আসতাম না। গায়ে গায়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে মানুষ টাকা তোলার জন্য। টাকা তুলতেও সময় লাগছে। ব্যাংকের সময় আরও বাড়ানো দরকার ছিল। সীমিত সময়ে মানুষের সেবা পেতে চরম ভোগান্তি হচ্ছে।’
ব্যাংক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে মনে হচ্ছে মানুষের ঈদ শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ গ্রাহকই কেনাকাটা করার জন্য টাকা তুলছে। তাদের ভয় লকডাউনে কী জানি হয়! প্রচুর গ্রাহক আসায় আমাদেরও সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরেও যতসম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’
নগরীর মেছুয়া কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায় সেখানে যেন গরুর হাট বসেছে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে ছিল না কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা। মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি কেনা কাটা করছে। তাই সবজির দামও অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশি।
নগরীর মিন্টু কলেজ মহল্লার বাসিন্দা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সামনে কড়াকড়ি লকডাউন। তাই আজকেই বাজার সদাই করে রাখছি। পরে যদি ঘর থেকে বের হতে না পারি! লাউ, কুমড়া, লাল শাক, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, সাবান, লবণসহ ২০ ধরনের পণ্য কেনা হয়েছে। যাতে করে এক মাসেও কোনো কিছুর কমতি না পড়ে। বাজারে বেশি ক্রেতা থাকায় পণ্যের একটু বেশি দামও মনে হচ্ছে। বাধ্য হয়েই সবকিছু একটু বেশি দামে কিনতে হয়েছে।’
আরেক ক্রেতা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে ঘরে তেমন বাজার সদাই নেই। আবার সামনে লকডাউন। তাই আজকে তিন হাজার টাকার মতো বাজার করেছি। যাতে করে বেশ কয়েকদিন চলে যায়। চিন্তা ভাবনা আছে লকডাউনে আর ঘর থেকে বের হব না। যেভাবে করোনা বাড়ছে বাইরে বের হলে ভয় লাগে।’
বিক্রেতা রুহুল আমিন বলেন, ‘দোকানে আলু, পটল, শশা, পেঁয়াজ, রসুনসহ প্রায় ৭০ হাজার টাকার মালামাল তুলেছিলাম। বেচাবিক্রি ভালো হওয়ায় দুপুরের মধ্যেই সব শেষ হয়ে গেছে। লকডাউনের জন্য ক্রেতা সমাগম প্রচুর হয়েছিল। এমনভাবে কয়েকদিন দোকানদারি করতে পারলে দুই মাস বসে খেলেও চলতো।’
ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সহসভাপতি শংকর সাহা বলেন, ‘ক্রেতা ও বিক্রেতাদের করোনা সংক্রমণ রোধে সচেতন হওয়ার জন্য বারবার মাইকিং করা হচ্ছে। তারপরও অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। মানুষ যদি নিজ এবং তার পরিবারের ভালো না বোঝে- আইন প্রয়োগ করে তাদেরকে কতটা স্বাস্থ্যবিধি মানানো যাবে তা বোধগম্য নয়।’
কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে করোনা সংক্রমণ রোধে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন সময়ে সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বারবার সর্তক করা হচ্ছে। আইনও প্রয়োগ করা হচ্ছে। তারপরেও মানুষ স্বাস্থ্য সচেতনতায় উদাসিন। সংক্রমণ রোধে নিজ থেকে মানুষকে সচেতন হতে হবে। লকডাউন বাস্তবায়নে সরকারের নির্দেশনা মেনেই পুলিশ মাঠে থাকবে।’