প্রথম বারের মতো মঙ্গল গ্রহে আজ সোমবার হেলিকপ্টার উড্ডয়নের কথা ছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা)। কিন্তু শুক্রবার হেলিকপ্টার পরীক্ষার সময় ডানায় সমস্যা দেখতে পেয়ে, সেই পরিকল্পনা বুধবার পর্যন্ত স্থগিত রাখতে হয়েছে। এখন তথ্য ঘেঁটে সমস্যার উৎস ও সমাধান খুঁজছে নাসা।
আগামী বুধবার রাত বা বৃহস্পতিবার ভোরে লাল গ্রহ মঙ্গলের আকাশে প্রথম হেলিকপ্টার ‘ইনজেন্যুইটি’ উড্ডয়ন হতে পারে, এমনটাই জানাল নাসা।
শনিবার এক বিবৃতিতে নাসা জানিয়েছে, পরীক্ষার সময় ইনজেনুইটি নামের হেলিকপ্টারটির ক্ষতি হয়নি।
সাধারণ চোখে দেখলে ভিন গ্রহে হেলিকপ্টার উড্ডয়নের কাজটি আহামরি কিছু নয় বলে মনে হতে পারে। কিন্তু প্রথম বার কাজটি করা প্রায় ততটাই কঠিন, যতটা কঠিন ছিল বিশ্বের প্রথম এরোপ্লেনটি উড্ডয়ন।
১৯০৩ সালে নর্থ ক্যারোলাইনার কিটি হক-এ যা করে দেখিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন রাইট ভ্রাতৃদ্বয়। সেই সফল প্রয়াসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নাসা মঙ্গলে পাঠানো প্রথম হেলিকপ্টারে রেখে দিয়েছে রাইট ভাইদের তৈরি প্রথম বিমানের খানিকটা সুতো। যাতে মঙ্গলে প্রথম উড্ডয়নের সঙ্গে জুড়ে থাকে পৃথিবীর প্রথম উড়ানের স্মৃতি ও ইতিহাসও।
মঙ্গলে হেলিকপ্টার উড্ডয়নে কেন বেগ পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা?
মঙ্গল গ্রহে মাটির টান চাঁদের থেকে বেশি, তবে পৃথিবীর থেকে অনেক কম। তাই পৃথিবী থেকে ১.৮ কিলোগ্রাম ওজনের যে কপ্টারটি পার্সিভিয়ারেন্স রোভারের পেটে করে পাঠানো হয়েছে, লালগ্রহের মাটিতে তার ভর ৬৭৫ গ্রাম। এত হাল্কা একটি
হেলিকপ্টার ওড়াতেও এত কেন বেগ পেতে হচ্ছে! উত্তর লুকিয়ে লালগ্রহের বাতাসে। সেখানে বাতাসের চাপ পৃথিবীর বাতাসের চাপের এক শতাংশেরও কম। এত কম ঘন বাতাসে ওইটুকু হেলিকপ্টারকে ওড়াতে হলেও তার ডানাকে পৃথিবীর যে কোনও কপ্টারের তুলনায় অনেক বেশি জোরে ঘোরাতে হবে। ইনজেনুইটির ডানা অত জোরে ঘোরানোর সময়েই সমস্যা দেখা দেওয়ায়, থামিয়ে দিতে হয়েছে পরীক্ষা।
নাসার প্রাথমিক পরিকল্পনাটি এই রকম: ছোট্ট হেলিকপ্টারটি প্রথমে ঘুরন্ত ডানায় ভর করে ১৬ ফুট উঁচুতে উঠবে। তার পরে সামনের দিকে এগোবে এবং যেটি তাকে নিয়ে এসেছে, সেই পার্সিভিয়ারেন্স রোভারের ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাবে। প্রথম উড়ানটি হবে ৩০ সেকেন্ডের। সফল হলে মাসখানেকের মধ্যে অন্তত পাঁচ বার ওড়ানো হবে হেকপ্টারটি। প্রতিটি উড্ডয়নে আগের বারের চেয়ে কঠিন কসরত করতে হবে ইনজেনুইটিকে। আপাতত এক দিনে সূর্যের আলোয় ব্যাটারি ফের পুরো চার্জড হয়ে গেলে ইনজেনুইটির একটি ক্যামেরা মঙ্গল-দিগন্তের একটি সাদা-কালো ছবি পাঠাবে পার্সিভিয়ারেন্স রোভার মারফত। পরে অন্য ক্যামেরায় তোলা রঙিন ছবিও পাঠাবে এটি। ১৪ তারিখের পর স্পষ্ট হবে, রাইট ভাইদের স্বপ্ন মঙ্গলেও ডানা মেলে কি না!