ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায় সোমবার রাতে আচমকা গরম বাতাসে কৃষকের আবাদ করা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধানের শীষ শুকিয়ে সোনালি ফসল এখন রুপালি রং ধারণ করেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় রোববার সন্ধ্যায় শুরু হয় আচমকা গরম বাতাস। তিন থেকে চার ঘণ্টা স্থায়ী হয় এই বাতাস। গভীর রাতে বাতাস কমে গেলেও সকালে উঠে কৃষকের মাথায় হাত। সূর্যের প্রক্ষরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উঠতি বোরো ফসলের শীষ শুকাতে থাকে। স্থানীয় জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, নেত্রকোনায় এ বছর মোট এক লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৩ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জেলার হাওড়াঞ্চলে মোট ৪০ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়। এলাকাবাসী ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গরম বাতাসে নেত্রকোনায় বোরো হাইব্রিড জাতের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
মদন, খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ উপজেলায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে বারহাট্টা, দুর্গাপুর, কলমাকান্দাসহ সব উপজেলা থেকে ধানের ক্ষতির খবর আসছে বলে জানায় জেলা কৃষি অফিস। খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের কৃষক শফিকুল ইসলাম তালুকদার, এরশাদ মিয়া, মনির হোসেন ও রঞ্জিত সরকার বলেন, ‘রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত শুধু গরম বাতাস ছিল।
কোনো রকম ঝড় বৃষ্টি ছিল না। বাতাসটা অসহ্য মনে হচ্ছিল। সকালে রোদ ওঠার পর হাওড়ে গিয়ে দেখি থোড় আসা ধান শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।’ একই উপজেলার নগর ইউনিয়নের সগ্রাখাই গ্রামের পিকলু সরকার, আদমপুর গ্রামের মৃদুল সরকার বলেন, ‘জীবনেও এমন গরম বাতাস দেখিনাই। সকালে উঠে দেখি খেতের ধান মরে গেছে।
আমরা কী খেয়ে বাঁচব। ঋণ করে গিরস্থি করেছি। এখন কি করে ঋণ দেব? কীভাবে সারা বছর স্ত্রী, সন্তানের ভরণপোষণ করব?’ খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘খেতের পর খেত নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা মাঠ পরিদর্শন করছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে জানানো হবে।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান অতি গরম আবহাওয়ায় এমনটা হয়েছে। আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে আছেন, জরিপ শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে।’
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) : উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার জানান, ইরি-বোরো মৌসুমের ধানের খেতের ক্ষতি হয়েছে ১৫ হেক্টর, শাক-সবজির খেত নষ্ট হয়েছে ২ হেক্টর। সরজমিনে দেখা যায়, এ ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। সহনাটী ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল হাই জানান, গরম বাতাস যেদিক দিয়ে গেছে সেদিক দিয়ে ধানের সবুজ খেত পুড়ে গেছে।
মদন (নেত্রকোনা) : মদনে রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আচমকা গরম বাতাস বয়ে যায়। এতে পৌরসভাসহ ৮ ইউনিয়নের বোরো ফসলসহ ঘরবাড়ি, আমসহ ফসলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে পৌরসভাসহ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে এবার ১৭ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। অথচ কয়েক ঘণ্টার গরম বাতাসে কৃষকের আবাদ করা ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সোনালি ফসল এখন রুপালি রং ধারণ করেছে। শুধু ধান নয়; এর সঙ্গে পাটেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হানুল হক জানান, ‘আমরা জরিপ করছি, বিশাল হাওড়ে ক্ষতির বিষয়টি নিরূপণ করতে একটু সময় লাগবে।’
কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম শাহজাহান কবির জানান, এ বছর উপজেলায় ২০ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। খুব ভালো ফলন হচ্ছিল। কিন্তু ধানের ফুল আসার সময় রোববার রাতের গরম ঝড়ো হাওয়ায় এ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে সকালেই উপ-সহকারীদের হাওড়ে পাঠানো হয়েছে। আমাদের কিছুই করার ছিল না। আমরা সরজমিন পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠাবো।
কিশোরগঞ্জ ব্যুরো : কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল আলম জানান, সোমবার বিকাল পর্যন্ত বিস্তীর্ণ হাওড় অঞ্চলের বোরো ফসলের জমি পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্তব্যরত লোকজন। তারা ২৫ হাজার হেক্টর উঠতি বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্তের এমন চিত্র খুঁজে পেয়েছেন। তবে সামগ্রিকভাবে প্রকৃত চিত্র পেতে হয়তো আরও দুই-তিনদিন সময় লাগতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা) : মোহনগঞ্জে হাওড়সহ বিভিন্ন গ্রামের আবাদকৃত বোরো ধানের ১৫০ হেক্টর জমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে এক হাজারেরও বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মোহনগঞ্জের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা দোলা মিঞা জানান, ধানের গোছা থেকে সদ্য বের হওয়া শীষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।