বই, খাতা ও কলম নয় একটি পুরাতন বাজারের ব্যাগ নিয়ে সকালে বাড়ি থেকে বের হয় শিশু সুখী(৭)। সাথে থাকে ছোট ভাই আমিন উল্লাহ(৫)। কনকনে শীতে ফুটফুটে চেহারায় মলিন জামায় আচ্ছাদিত শিশু সুখী তার ছোট ভাই আমান উল্লাহ।
ছোট ভাইকে নিয়ে গত মঙ্গলবার সন্ধায় উপজেলার নিজসরাইল সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে কাপাঁ কাপাঁ কন্ঠে শিশু সুখী বলেন মামা কিছু সাহায্য দিবেন? একটি পুরনো বাজারের ব্যাগ হাতে মায়াবী চেহারার শিশু দুটির সাহায্য চাওয়ার ব্যপারটি হঠাৎ হৃদয়কে যেন নাড়িয়ে তুলেছে। কেমন যেন অন্তরে শিশু দুটির প্রতি একটু মায়ার সৃষ্টি হয়েছে।
যেই সময়ে মায়ের আদর স্নেহ ও পরম মমতায় বই, খাতা ও কলম নিয়ে টেবিলে পড়তে বসার কথা সেই সময়ে বাজারের পুরনো ব্যাগ হাতে নিয়ে ভিক্ষা চাইছেন। তাদের সাথে কথা বলার সময় ডুকরে কেঁদে উঠেন শিশু সুখী। এই প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের নন্দীপাড়ার বাবুর মন্দির এলাকায় তাদের বাড়ি। পিতার নাম জসিম মিয়া এবং মাতার নাম হোসেনা বেগম। অন্যত্র বিয়ে করে ভাই বোনসহ মায়ের কোনো খবর নেন না তাদের পিতা জসিম। অভাব অনটনের সংসারে সুখীসহ তাদের ভাই-বোনের ভরণ-পোষনের একমাত্র অবলম্বন তাদের মা ছাড়া আর কেউ নেই। নানা, নানী, মামা, খালা কেউ না থাকায় নানীর রেখে যাওয়া জায়গায় একটি টিন শেডের ঘরে তাদের বসবাস।
সংসারের আর্থিক ব্যয়ভার বহনে মাঠি কেটে প্রতি দিন ২শ টাকা রোজগার করেন তাদের মা। তা দিয়ে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ভরণ-পোষণ। এই স্বল্প টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের মায়ের। তাই মায়ের নির্দেশেই বাজারের ব্যাগ নিয়ে প্রতিদিন সাহায্যের জন্য বাড়ি থেকে বের হতে হয় তাদের। দিন শেষে কোন দিন ১ শ টাকা আবার কোনদিন তাও জোগার করা সম্ভব হয় না। এই টাকা দিয়েই আলু আর পাঙ্গাস মাছ কিনে নিয়ে তাদের খাওয়ান তাদের মা। আর তা খেয়েই চলছে তাদের জীবন। চুমকী(৬), সুমাইয়া (৪) নামে দুই বোন ও আমিন উল্লাহ(৫) ও আব্দুল্লাহ(১) নামে দুই ভাই রয়েছে।
এদের মধ্যে বোন সুমাইয়াকে নিয়ে কিছু দিন পূর্বে সুখী সাহায্য চাইতে গিয়ে প্রিয় বোন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় বলে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান সুখী। তার পরেও অভাবের তাড়নায় ছোট ভাই আমিন উল্লাহকে নিয়ে আর্থিক সাহায্যের জন্য প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে সারাদিন সাহায্যের জন্য কালিকচ্ছ, সরাইলসহ অন্যান্য এলাকায় ঘুরে বেড়ায় সুখী।
দুপুরে পুরী- সিঙ্গারা খেয়েই দিন পার হয় তাদের। সারা দিনে ১শত টাকার মত সাহায্য পেয়ে এশার নামাযের আযানের পরে বাড়ি ফেরেন তারা। লেখা পড়া করতে ইচ্ছে হয় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢুকঁরে কেদেঁ সুখী জানান, লেখা পড়া করতে খুব ইচ্ছে হয়। লেখা-পড়া করে ডাক্তার হতে চাই।
বেচেঁ থাকার লড়াইয়ে আলু আর পাঙ্গাস কিনতে পুরাতন বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে সাহায্যের ঘূর্নিপাকে পরা অবুঝ শিশু সুখীর ডাক্তার হবার স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কি? সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে এলেই এই সুখীদের হাতে ভিক্ষার থলির পরিবর্তে উঠে আসতে পারে শিক্ষার বই। আর তাতেই ধীরে ধীরে পূরণ হতে পারে সুখীদের ডাক্তার হওয়ার সেই স্বপ্ন।