তিনি ছিলেন নির্মম, রক্তপিপাসু এক রাজা। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্যমতে, তিনিই বিশ্বের একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ১১৭১ সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ছিলেন ৪ জন এবং উপপত্নি ৫০০ জন। বলছি মরক্কোর শাসক মৌলে ইসমাইলের কথা। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম শাসক ছিলেন তিনি।
ইউরোপীয়রা তার নির্মমতা কারণে নাম দিয়েছিল- ‘ব্লাডি ব্লু কিং’ বা ‘ব্লাথথারস্টি’। মরক্কোতে তিনি ‘ওয়ারিয়র কিং’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। যার কাজ ছিল রাজ্যের অন্যায়-অত্যাচার দমন না করে বরং সেগুলোতে উৎসাহ দেওয়া। তার শাসনকালে বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে যুদ্ধ-বিগ্রহতে।
অত্যাচারী শাসক
১৬৪৫ সালে মরক্কোর সিজিলমাসায় জন্মগ্রহণ করেন মৌলে ইসমাইল। তিনি আলাউইট রাজবংশের দ্বিতীয় শাসক ছিলেন। বর্তমানেও মরক্কো শাসিত হয় রাজবংশ দ্বারা। ১৫ ভাইয়ের মধ্যে ৭তম ছিলেন ইসমাইল। তিনি ১৬৬৭-১৬৭২ সাল পর্যন্ত মরক্কোর ফেজের কিংডম গভর্নর ছিলেন। তখন শাসক ছিলেন তার সৎ ভাই আল-রশিদ।
তিনি খুবই চতুর এবং হিংস্র ছিলেন। রাজ্য শাসনের নেশা তার রক্তে বইছিলো। এ কারণে সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করে আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে থাকেন ক্ষমতা হাতের মুঠোয় নিতে। ইসমাইল সিংহাসনের আরোহণ করেন তার সৎ ভাই আল-রশিদের মৃত্যুর পর।
এরপর ইসমাইল শুরু করেন নিজের রাজত্ব। তার শাসনকাল ৫৫ বছর ধরে চলেছিল। মরক্কোর আর কোনো সুলতান বা রাজা এতো দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আসীন ছিলেন না। ইসমাইল রাজ্য শাসন করা শুরু করেন ২৬ বছর বয়স থেকে। তখন তার দেশ বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে যুদ্ধ, অন্তর্কোন্দল ও রাজত্বের দখল সংক্রান্ত প্রতিকূলতায় জর্জরিত ছিল।
তার শাসন কাল ছিলো ১৬৭২ থেকে ১৭২৭ পর্যন্ত। মানুষের রক্ত ঝরাতে তিনি পছন্দ করতেন। মানুষ হত্যা করা তার কাছে ছিল খেলার মতো। মৌলে ইসমাইল খুবই শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন।
তার অঞ্চলকে সীমাবদ্ধ করার জন্য প্রতিষ্ঠিত করে ব্ল্যাক গার্ড বাহিনী। যেখানে ছিল আফ্রিকান কালো দাস বাহিনী। যা ‘আবিদ আল বুখারি’ বা ‘বুখারীর দাস’ নামে পরিচিত। এ সৈন্যবাহিনী দিয়েই তিনি সব ধরনের কাজ করতেন।
হাজার সন্তানের জনক
গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্যমতে, মৌলে ইসমাইল ১১৭১ জন সন্তানের জন্মদাতা, যা রেকর্ড করা ইতিহাসের সর্বোচ্চ বংশধর। ফরাসি কূটনীতিক এবং গবেষক ডোমিনিক বুসনট জানিয়েছেন, সুলতানের চার স্ত্রী ও ৫০০ জন উপপত্নীর এক হাজার ১৭১১ জন সন্তান ছিল। ইসমাইল তার ৮২ বছর জীবনকালে ৫৫ বছর রাজ্য শাসন করেছেন।
সুলতানের হাজার সন্তান নিয়ে ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা নানা বিষয় খুঁজে বের করেছেন। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের তথ্য অনুসারে, সর্বাধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য সুলতান প্রতিদিন গড়ে ০.৮৩ থেকে ১.৪৩ বার যৌনমিলন করতেন!
গবেষকদের মতে, এ কাজের জন্য তার হেরেমে ৬৫ থেকে ১১০ জন নারী ছিল! বাকি উপপত্নিদেরকে তিনি বিভিন্ন যুদ্ধের পর ধরে আনেন। বেশিরভাগই তার হেরেমে এবং মরক্কোতে দাসের কাজ করত।
রক্তপিপাসু হলেও মৌলে ইসমাইলের শাসনকালকে স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত হয়। তার শাসনকালের শেষের দিকে অবশ্য রাজ্যে শান্তি ফিরে এসেছিল। তিনি দেশকে একীভূত করেছিলেন। রাজ্য প্রসারিত করেছিলেন এবং চারপাশে অসাধারণ সব নির্মাণকাজ করেছিলেন।
তিনি মেকেনেস নামের যে রাজধানী শহরটি তিনি তৈরি করেন। মাত্রাতিরিক্ত অপচয় করতেন এ রাজা। এ কারণে মরক্কোর ভার্সেইলি বলে অভিহিত করা হতো তাকে। এ শহর তৈরিতে ব্যবহৃত কিছু পাথর প্রাচীন রোমান ধ্বংসাবশেষ থেকে লুট করে আনা হয়েছিলো। মৌলে ইসমাইলের সময়কালেই মরক্কোর রাজধানী শহর ফেজ থেকে মেকেনেসে স্থানান্তর করা হয়।