গত ১ ফ্রেব্রুয়ারি নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। গ্রেফতার করে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চিকে।
অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের রাজপথে নেমে আসে দেশটির জনগণ। আন্দোলনরত বেসামরিক জনগণের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা, যা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
এদিকে, অভ্যুত্থানের জন্য সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করায় চীনা মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা জ্বালিয়ে দেয় মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীরা। এর পরপরই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ইয়াঙ্গুনের কিছু অংশে সামরিক আইন জারি করে।
রবিবার মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালালে অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়।
ইয়াঙ্গুনে অবস্থিত চীনা দূতাবাস এই হামলাকে ‘অত্যন্ত জঘন্য’ বলে নিন্দা জানিয়েছে এবং সহিংসতা বন্ধ, অপরাধীদের শাস্তি এবং দেশটির চীনা ব্যবসা এবং জনগণকে রক্ষা করার জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
দূতাবাসের মতে, বেশ কয়েকটি চীনা মালিকাধীন কারখানা ভেঙে ফেলা হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে অনেক চীনা নাগরিক আহত হয়।
দূতাবাস বলেছে, আমরা মিয়ানমারের জনগণকে তাদের দাবি বৈধভাবে প্রকাশ করার আহ্বান জানাচ্ছি এবং চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার জন্য উস্কানি ও শোষণ এড়াতে অনুরোধ করছি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীরা চীনের সমালোচনা করেছে এবং তারা বেইজিংকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সমর্থক হিসেবে দেখছে।
এমন পরিস্থিতিতে চীনের প্রতিক্রিয়া অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে। তারা এটিকে মিয়ানমারের একটি ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যেকোনও পদক্ষেপ সংঘাত বাড়াতে পারে এবং পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে।
মিয়ানমারের নাগরিকরা সামরিক জান্তার সাথে চীনের সম্পর্ক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তার নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা চীনের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর তালিকা শেয়ার করেছে।
ইয়াঙ্গুনের আক্রান্ত বাসিন্দারা বলেছেন, তারা বেইজিংয়ের ভূমিকা নিয়ে দিনদিন হতাশ হচ্ছেন।
ফেডারেশন অব জেনারেল ওয়ার্কার্স মিয়ানমারের চেয়ারপার্সন মন সান্দার মাইন্ট বলেছেন, বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় চীনা নিয়োগকর্তারা গার্মেন্টস শ্রমিকদের অনেককে হুমকি দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, চীনা দূতাবাসের বিবৃতি বিক্ষোভকারীদের প্রতি বেইজিং-এর বিদ্বেষকে অস্বীকার করেছে এবং নিহত মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রতি কোনও সহানুভূতি দেখায়নি।
মিয়ানমারের জাতীয় পোশাক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, দেশটির প্রায় ৪০ শতাংশ পোশাক কারখানার মালিক চীনা।